ভাইস চ্যান্সেলরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিজের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। নিজ এলাকার সংসদ সদস্য, ইউজিসির চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং সর্বশেষ যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোন রাজনৈতিক পদে থাকার নিয়ম নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের আট নাম্বার ধারায় লেখা আছে, চ্যান্সেলর ও ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব থাকবেন। এছাড়া ৪৪ নাম্বার ধারার চার নাম্বার উপধারায় উল্লেখ আছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত জবির ভিসি মীজানুর রহমান যুবলীগের সভাপতি মন্ডলীর এক নম্বর সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের পরিপনন্থী।
সম্প্রতি জবি ভিসি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশোতে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদে দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যুবলীগের ভাবমূর্তি ফেরাতে চেয়ারম্যান হিসাবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে পালন করতে আমি রাজি আছি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ ছাড়তেও কোন দ্বিধা নেই’। এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সামলোচিত হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বাজে মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের এমনও মন্তব্য করতে দেখা গেছে ভিসির বয়স ৬০ উর্ধ্বে। তিনি তো এখন আর যুবক নেই। কোন নিয়মে তিনি এই পদ চাই? এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পরিবার পেইজে স্ট্যাটাসে দেখা গেছে জবির উপাচার্যকে যুবলীগের চেয়ারম্যান করলে ঢাবির ভিসিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করতে হবে বলে দাবি জানান তারা।
টকশোতে ভিসি মীজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চেয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান পদকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে যুব সম্রাট হতে চান। তিনি বলেন, ভিসি হিসাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করা যায় কিন্তু সম্প্রতি সময়ে ক্যাসিনোকান্ডে কোটি কোটি তরুণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এই সংগঠনের জন্য অনেক কষ্ট করেছি, যুবলীগ আমার প্রাণের সংগঠন। আমি অবশ্যই যুবলীগের পদকে গুরুত্ব দেব। বর্তমানে সংগঠনটি একটি সংকটময় সময় পার করছে। তরুণদেরকে সঠিক পথে আস্থার মধ্যে ফেরাতে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি তা পালন করবেন।
তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে লড়বেন কি না জানতে চাইলে মীজানুর রহমান বলেন, নিজ থেকে তিনি কোনো পদ চাইবেন না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তাকে দায়িত্ব দেন তাহলে তিনি ভিসি পদ ছেড়ে দিয়ে যুবলীগের পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে জবি ভিসি হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর সাত বছর পূর্ণ হতে চলছে। মেয়াদ শেষ হবার কেবল এক বছর বাকি আছে। তাই তিনি নিজের পছন্দের জায়গা খোজার চেষ্টা করছেন। তিনি গত জাতীয় নির্বাচনে তার নিজে এলাকা কুমিল্লার থেকে সাংসদ নিবার্চন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য তিনি কুমিল্লার পক্ষে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর হিবাবেও অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এছাড়া গত কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন জবি ভিসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান পদে আরেফিন সিদ্দিকী ছাড়াও আরো কয়েকজনের নাম বিবেচনায় রাখা হয়েছিলো।
তারা হলেন ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন অর রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি শরীফ এনামুল, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক খন্দকার বজলুল হক।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেলে প্রবেশ করার জন্য শত চেষ্টা করলেও সর্বন্নিম্ন ভোট পাওয়ায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এছাড়া সামনে তার পছন্দের কোন জায়গা নেই। গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সদস্যের ভিসি প্যানেল নির্বাচনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটাভোটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ৪২ ভোট, ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ৩৬ ভোট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এস এম মাকসুদ কামাল ৩০ ভোট পেয়ে মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া ভিসি প্যানেলে জায়গা পাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ ২৮ ভোট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ২০ ভোট পেয়ে হেরেছেন।