প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের পর গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে সেই ৭৫ সালের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সেখানে সব থেকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবারের নির্বাচন হয়েছে।’
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে মত বিনিময়কালে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক চক্রান্ত ছিল,ষড়যন্ত্র ছিল।
তিনি বলেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেলের ফিসপ্লেট খুলে রেলের বগি ফেলে দেয়া, রেলে আগুন দেয়াসহ নানা অপকর্ম করে নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় কথা হল জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে এবং ভোট দিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার যে ফিরে পেয়েছে সেটা এবার তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় সভা করেছি। নির্বাচনের পরেও টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলাম, আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে। এরপর আমি মনে করলাম আপনারা ভোট দিয়ে আমাকে কোথায় পাঠালেন সেই জায়গাটা তো আপনাদের একটু দেখতে হবে। সেজন্যই আজকে আমার এখানে আপনাদের দাওয়াত, সেজন্যই আপনারা এখানে এসেছেন। তিনি গণভবন সবাইকে ঘুরে দেখারও আমন্ত্রণ জানান। কারণ, এটা তাদেরই ঘর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে কিন্তু আপনাদের এখানে কোনো রাজনীতি করতে ডাকিনি। আমি মনে করি আজকে টুঙ্গিপাড়ার থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন এই গণভবনের মাটি আজকে ধন্য হয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করেছি। সেটাও আমি মনে করি, আপনাদেরই অবদান। কারণ, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া সেটা কখনো সম্ভব ছিল না। সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, আমি এটুকুই চাই টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালীপাড়ায় আমি বারবার প্রার্থী হয়েছি, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, আপনারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আমি জানি, ’৭৫-এর পর এই সমস্ত অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করেছেন। যাহোক আওয়ামী লীগ সরকারি আসার পর থেকে আমরা ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করেছি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি। তার সরকারের ভূমিহীন-গৃহহীণকে ঘর করে দেয়াসহ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়ার পদক্ষেপের উল্লেখ করে নিজেদের এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকলে খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। কেননা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও আর ঠিকানাবিহীন থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সংসদের অধিবেশনে রয়েছে। যেখানে তার প্রশ্নোত্তর পর্ব রয়েছে, যেটা তিনিই চালু করেছিলেন। কারণ, তিনি মনে করেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নিজেরও একটা জবাবদিহিতা থাকা দরকার। তিনি পর্যায়ক্রমিক ভাবে তার এলাকার জনগণকে ভাগ ভাগ করে সংসদ অধিবেশন প্রত্যক্ষ করার সুযোগ করে দেবেন বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটির উল্লেখ করে বলেন, তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানা বাড়িটিকে দান করে দিয়েছেন। যেটি একটি জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে। যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ আসেন সেটা দেখার জন্য।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমাদের এলাকার লোকজনেরও এটা দেখার দরকার। কারণ, আপনারা এমন একটা জায়গা থেকে এসেছেন যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই ঘুমিয়ে আছেন। কাজেই তার জীবন যাপন, ৭৫-এর মর্মান্তিক হত্যাকাণ, যেখান থেকেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এসব অনেক কিছুই জানতে পারবেন আপনারা সেই বাড়িতে গেলে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন কাজেই আমার একটাই দায়িত্ব এই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আর সেই কাজটা আমি যে নিশ্চিন্তে করতে পারছি, সেটা করতে পারছি কেবল আপনাদের জন্য। কারণ, আপনারা আমাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছেন। আমার সব দায়িত্বতো আপনারাই নিয়েছেন। আমার কোনো কষ্ট নেই। আমার মনে হয়, এই দায়িত্বটা যদি আপনারা না নিতেন বাবা-মা-ভাই হারিয়েছি, আমার জন্য আমার হয়ে বলার কে আছে? কিন্তু আজকে আপনারা আমাকে সেই সাহস দিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন। যার জন্য আমি নিশ্চিন্ত মনে দেশের কাজ করতে পারছি। দেশের মানুষের কাজ করতে পারছি ।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিটি করা থেকে শুরু করে যেভাবে আপনারা কাজ করেছেন এটা সারা বাংলাদেশের সমস্ত প্রার্থীর জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে এবং আমাদের অনেক প্রার্থী ও তা অনুসরণ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা বাস্তব যে এই ১৫ বছরে বাংলাদেশকে আমরা বদলে দিতে পেরেছি। সব থেকে বড় কথা আজকে পদ্মা সেতু হয়ে গিয়েছে বলেই সকলে খুব সহজেই আপনারা (গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে) চলে আসতে পারছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিল। সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রমাণ করেছেন যে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে আমরাও পারি।
তিনি বলেন, সামনে আমাদের যাত্রা পথ এত সহজ নয়। আমাদেরকে অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। অনেক চক্রান্তই বাংলাদেশটাকে ঘিরে আছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া এবং প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ফ্রিলান্সার তৈরি করায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। যাতে ঘরে বসেই দেশ-বিদেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায় এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে তার সরকারের পদক্ষেপ ও বিনা জমানতে ঋণ সুবিধা প্রদানসহ সরকার প্রদেয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার উল্লেখ করেন।
কোনোরকম পরীক্ষায় একটা পাশ করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুব সমাজকে নিজের বস নিজে হবার মাধ্যমে আরো ১০ জনের কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসার জন্য আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবারো আহ্বান জানান তিনি ।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী যুদ্ধাবস্থার জন্য খাদ্য ক্রয়মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির কারণে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষদের অসুবিধা হবার কথা উল্লেখ করে সারাদেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় তার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার জনগণও পিছিয়ে থাকবেনা মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাসের পাশপাশি বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার আহ্বানও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচিত চেয়ারম্যান মেম্বাররা আছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আমরা অনেক প্রকল্প নেই এবং কাজ করি, সেই কাজগুলো যাতে যথাযথভাবে হয়। মানুষ যেন এই কাজের সুফল পেতে পারে এবং এর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই স্থানীয় সরকারের যে কাজগুলো সেগুলো আপনারা করবেন। কাজের মানটা যেন ঠিক থাকে এবং কাজগুলো যেন যথাযথভাবে হয়। যেভাবে কাজ করলে পরে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার একটাই আকাঙ্ক্ষা শেষ জীবনে তিনি টুংগীপাড়ায় থাকবেন। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘুমিয়ে আছেন।
সূত্র : বাসস