যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সাস্ট এলাইনাই এসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইনক’র উদ্যোগে সাস্টিয়ান নাইট ও নতুন কমিটির অভিষেক সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করে নিউইয়র্ক শহরের কুইন্স বুলেবার্ডের আগ্রা প্যালেস পার্টি হলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাস্টিয়ান নাইট ও ইনোগোরেশন সিরিমনি’ ব্যানারে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথমবারের মত এই মিলনমেলায় অংশ নেয় নিউইর্য়ক, নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ভার্জিনিয়া, মিশিগানসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্টেটে অবস্থানরত শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, কানাডা থেকে আগত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণসহ সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র ও অতিথিবৃন্দদের আলাপচারিতায় মুখর হয়ে উঠে পুরো অনুষ্ঠান। কুইন্সের আগ্রা প্যালেসে যেন এক টুকরো সাস্টে পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইর্য়কের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, বিশেষ অতিথি ছিলেন এনওয়াইপিডির ১০৪ প্র্রসিস্কংটের (পুলিশ অফিস) এক্সিকিউটিভ অফিসার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ক্যাপ্টেন এ.কে.এম শফিউল আলম প্রিন্স এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশ্ববদ্যিালয়ের প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সালেকুর রহমান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল সায়েন্সের সাবেক ডীন ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. হাবিবুল আহসান।
এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথি শিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. নাজিয়া চৌধুরী, সাপ্তাহিক প্রথম আলো সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. এ.এইচ.এম বেলায়েত হোসেন, নিউইর্য়ক পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ক্রিমিনাল জাস্টিস ব্যুরোতে কর্মরত লেফট্যানেন্ট সাজেদুর রহমান সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ এর এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদসদ্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মনোরম পরিবেশে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি কোরাস পরিবেশন করে নতুন প্রজন্মের শিশুরা। এরপর স্বাগত বক্তব্যে দেন সাস্ট এলামনাই অব ইউ.এস.এর প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় তথা অর্থনীতি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ ফরিদ আলম। তিনি ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটিকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন অতিথি শিক্ষকরা। বিশ্ববদ্যিালয়ের ৪র্থ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী বেলায়েত চৌধুরী সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী সায়েদ জাবেদুল মুনির সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদসদ্যরা হলেন সহ-সভাপতি আহমেদুর রহমান রণি, হুমাইরা সুলতানা, আলমগীর হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমেদ মাসুম, অর্থ সম্পাদক আজহার আহমেদ, সহ-অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মঈনুল হোসেন বাবু, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান সুফিয়ান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সিকান্দর এম. হক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাকির হোসেন, মহিলা সম্পাদক ফারহানা ইসলাম, অফিস সম্পাদক তাসফিক রহমান এবং কার্যকরী সদস্য ড.আলাউদ্দিন ভূইয়াঁ, অসীম কুমার সরকার, মিসকাত জাহান নিশু, নাজনীন আক্তার মৌসুমী, আ.ক.ম ইলিয়াছ, ওমর শোয়েব ও আহমেদ ফাহাদ।
এরপর সাস্ট এলামনাই অব ইউ.এস.এর ইতিহাসে প্রথমবারের মত প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উম্মোচন করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশ্ববদ্যিালয়ের প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সালেকুর রহমান চৌধুরী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. হাবিবুল আহসান। উপস্থিত অতিথিরবৃন্দসহ প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা স্মরণিকার সম্পাদক বর্তমান কমিটির প্রকাশ ও প্রচারণা সম্পাদক অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সিকান্দর হকের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এদিকে পুরো অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত সভাপতি বেলায়েত চৌধুরী এবং সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন নবনির্বাচিত সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমেদ মাসুম।
অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, আমি আশা করছি সাস্ট এলাইনাই এাসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র সদস্যরা একই প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করবেন এবং এলামনাইয়ের মিশন ও ভিশনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য নতুন কমিটি তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি আরও বলেন, সাস্ট এলামনাই বর্তমানে যে ঐক্যবদ্ধস্থানে আছে সেটা আপনারা ধরে রাখবেন এবং ভবিষ্যতে আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে সাস্ট উইল বি সাস্টেইন।
ক্যাপ্টেন এ.কে.এম শফিউল আলম প্রিন্স তার বক্তব্যে বাংলাদেশী তরুণ প্রজন্মদের নিউইর্য়ক পুলিশে যোগদানের উদাত্ত আহবান জানান।
বিশ্ববদ্যিালয়ের প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সালেকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য হল মিলনমেলা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণার্থে ভাল কিছু করার প্রয়াস। প্রাথমিক অবস্থায় স্মৃতি হিসেবে শাবিতে ৫ টি ফ্যাকাল্টিতে অনার্সে প্রথম স্থানকারীদের জন্য এই এসোসিয়েশনের নামে প্রতিবছর ৫ টি মেডেল প্রদানে নতুন কমিটির প্রতি তিনি উদাত্ত আহবান জানান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পিছনে প্রথম ভিসি প্রয়াত প্রফেসর ড. সদরুদ্দীন চৌধুরী অনন্য অবদানের কথা তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
প্রফেসর ড. হাবিবুল আহসান বলেন, এ কমিটি যেন ভবিষ্যতে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে এই আশা ব্যক্ত করি। পাশাপাশি সকল সাস্টিয়ানরা নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দল, মত নির্বিশেষে এসোসিয়েশনকে যেন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এ কামনা করি।
প্রফেসর ড. নাজিয়া চৌধুরী বলেন, সত্যিকার অর্থে এলামনাই হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরে, যারা এলাইমনাইয়ে আছেন তাদেরকেই দেখেই মানুষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদন্ড সহজেই করতে পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে এলামনাইয়ের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ফরিদ আলম তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাস্টিয়ানদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি তাহলে আমার বিশ্বাস সাস্টিয়ানরা আমরা প্রবাসের বুকে অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারব।
নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী সায়েদ জাবেদুল মুনির তার বক্তব্যে বলেন, আমার উপর যে গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা যথাযথ পালনে আপ্রাণ চেষ্টা করব।
সভাপতি বেলায়েত চৌধুরী বলেন, সাস্ট অ্যালামনাই অন্যতম বড় লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উন্নয়ন সাধন, তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা ও পরস্পরের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং তৈরি করা। তিনি অনুষ্ঠান সফল করার জন্য যেসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান স্পন্সর দিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা কেেরছন তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। সভাপতি বেলায়েত চৌধুরী অদূর ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এই ধরনের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
সবশেষে দেশীয় পরিবেশে নৈশভোজের পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী রাজীব ভট্টাচার্য এবং ত্রিনিয়া হাসান।