শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ভয়াবহভাবে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০
  • ২৭৯ বার

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারী সংক্রমণে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে বড় ধস নেমেছে। চলতি বছরের মার্চের পর এপ্রিলেও ধস অব্যাহত রয়েছে। চলতি এপ্রিলের প্রথম ১৩ দিনে ৩৩ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ৫১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কয়েক দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৩৫ শতাংশ।

গত মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কম ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। মার্চ মাসের রেমিট্যান্স গত এক বছর তিন মাসের চেয়ে সবচেয়ে কম। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়ার পর এ মার্চে অনেকে দেশে ফিরে আসেন। এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে আসেন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে রেমিট্যান্সের প্রবাহ খুব খারাপ। সামনের দিনগুলোয় কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বিদেশেও প্রবাসীরা লকডাউনে আছেন। তাদের ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে খোলা। প্রবাসীরা কাজ হারিয়ে ঘরবন্দি। অনেকে বেতন পেলেও এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধ থাকার কারণে তারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না। রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্রমশ কমছে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিশ্ব অর্থনীতি আরও সংকটের মধ্যে পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলনির্ভর অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়বে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর। দেশে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে আশার আলো জাগিয়ে রাখে রেমিট্যান্স। করোনার মহামারী তাতেও ছায়া ফেলেছে। গোটা বিশ্ব এই মহামারীর কবলে পড়ায় রেমিট্যান্স অচিরে যে আবার জেগে উঠবে না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই অর্থনীতিবিদদের। বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্সের অধঃগতি নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। যারা আছেন, তারাও কাজ করতে পারছেন না। সব বন্ধ। নিজেরাই চলতে পারছেন না। দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে অর্থ পাঠাবেন কী করে? যতদিন যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে ২০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে, সে দেশগুলোর অর্থনীতি মূলত তেলনির্ভর।

কতদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোয় রেমিট্যান্স আরও কমবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে যারা ফিরে এসেছেন, তারা আবার ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আগস্টে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অক্টোবরে ১৬৪ কোটি, নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আসে যথাক্রমে ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ ও ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

রেমিট্যান্স কমার পাশাপাশি রপ্তানি কমে গেছে। চলতি এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে পোশাক খাতে রপ্তানি হয়েছে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই মাসে রপ্তানি হয় ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারের। পোশাক খাতে রপ্তানি কমেছে ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর বাইরে ২৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে।

রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের এই পতনে বাজারে ডলার বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার একদিনেই বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত (২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল) ৬২ কোটি ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ে কেনা হয়েছে ৪০ কোটি ডলারের মতো। যে ডলার কেনা হয়েছে তার পুরোটাই গত মার্চ মাসে কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সরকার ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছিল। তাতে বাজারে ডলারের সরবরাহও বাড়ে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি কমে যায়।

ফলে ব্যাংকগুলোর ডলারের প্রয়োজনও কমে এসেছিল। এ পরিস্থিতিতে বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডলার কেনা শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে প্রায় তিন বছর বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে কোনো ডলার কেনেনি। বাজারে ডলার ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলো আমদানি পর্যায়ে ডলারপ্রতি দাম দেড় থেকে দুই টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে আমদানিনির্ভর শিল্পগুলোর আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com