বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

ভারতের অতিমাত্রায় প্রভাব থেকে বেরিয়ে যাওয়া সার্বভৌম দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩৬৪ বার

চীনের প্রভাবশালী সরকারি মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমস বলেছে, নয়াদিল্লী এই অঞ্চলকে তাদের বাড়ির উঠোন মনে করে, তাদের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আর চীনের মতো বড় দেশের সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্রে অন্যদের জন্য বাধার সৃষ্টি করে। এই শীতল যুদ্ধের মানসিকতা আসলে সময়ের যে উন্নয়ন চাহিদা তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। চীনের সাথে সুসম্পর্কের আরেকটি অর্থ হলো নেপাল ভারতের অতিমাত্রায় প্রভাব থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সার্বভৌম দেশের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।

পত্রিকাটি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক নেপাল সফরের কথা উল্লেখ করে বলেছে, এ সফর ছিল ঐতিহাসিক, যেখানে হিমালয় অঞ্চলের দেশটির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। ২৩ বছর পর এটা ছিল কোন চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম নেপাল সফর। দুই দেশ ১২ অক্টোবর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে, যার ভিত্তি হবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য স্থায়ী বন্ধুত্ব। চীন যে মূল্যবোধ ধারণ করে, এই চুক্তির মধ্যে সেটা ফুটে উঠেছে: বড় ও ছোট উভয় দেশই সমান এবং উভয়ের অর্জনের ভিত্তিতে তারা সহযোগিতার সম্পর্ক গড়তে পারে। চীন-নেপাল সম্পর্ক অন্যান্য ক্ষুদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটা বিশ্বাসযোগ্য মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে, যেটার মাধ্যমে তারা চীনের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পারে।

গ্লোবাল টাইমসে বলা হয়, অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে চীন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে আলাদা। চীন সকল দেশের সমতার উপর বিশেষভাবে জোর দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দেখে ওই দেশটির স্ট্যাটাস কি। ক্ষুদ্র দেশের প্রতি তারা সাধারণত ততটা গুরুত্ব দেয় না। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, চীন-নেপাল সম্পর্ক আন্তর্জাতিক সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নেপালের সাথে সম্পর্ক প্রশ্নে পত্রিকাটিতে বলা হয়, দুই দেশ প্রায় ২০টি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে ক্রস-বর্ডার রেলওয়ে নির্মাণের বিষয়টিও রয়েছে। দুই দেশ যদি রেলওয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়, তাহলে স্থলবেষ্টিত নেপাল স্থল-সংযুক্ত দেশে রূপ নেবে এবং আদর্শ সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে তাদের রফতানি করার সুযোগ খুলে যাবে। ফলে রফতানির জন্য শুধুমাত্র নয়াদিল্লীর উপর নির্ভর না করে তারা অন্য পথেও সেটা করতে পারবে। ক্রস-বর্ডার রেলওয়েটি হবে চীনের কিংহাই-তিব্বত রেলওয়ের একটা সম্প্রসারিত অংশ, যেটা নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুকে দক্ষিণপশ্চিম চীনের তিব্বতের গাইরোং কাউন্টিকে সংযুক্ত করবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করা ছাড়াও, এই রেলওয়ের মাধ্যমে চীন ও নেপালের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের বিষয়টিও ফুটে উঠবে। নেপাল চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ফ্রেমওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রেসিডেন্ট শি’র সফরের সময় দুই দেশ রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। নেপাল-চীন সম্পর্কের জন্য এই সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

পত্রিকাটিতে বলা হয়, নেপালের সাথে সম্পর্ক থেকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার দুই আঞ্চলিক শক্তি চীন আর ভারতের পার্থক্য বুঝতে পারি। নয়াদিল্লী এই অঞ্চলকে তাদের বাড়ির উঠোন মনে করে, তাদের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং চীনের মতো বড় দেশের সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্রে অন্যদের জন্য বাধার সৃষ্টি করে। নেপাল যদিও রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন, কিন্তু নয়াদিল্লীর প্রভাবের কারণে কূটনৈতিকভাবে তারা খুব কমই স্বাধীনতা ভোগ করতে পেরেছে। শ্রীলংকা, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের মতো দেশগুলোরও কমবেশি নেপালের মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে।

পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে, প্রেসিডেন্ট শি-কে যখন ভারতে উষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হয়, ভারতের সেনাবাহিনী তখন চীনের দক্ষিণ তিব্বতে ভারতীয় ইতিহাসের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম মহড়া চালিয়েছে। চীনের প্রতি এটা ছিল মারাত্মক উসকানি। ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্রগুলো যদিও এটা বলেছে বলে শোনা গেছে যে, এই সামরিক মহড়ার সাথে প্রেসিডেন্ট শি’র সফরের কোন সম্পর্ক নেই এবং অনেক আগে এটার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু তারপরও এটা সত্য যে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সময় নির্ধারণের ব্যাপারে কোন সমন্বয় করেনি।

গ্লোবাল টাইমসের মতে, ভারতের পদক্ষেপের কারণে চীন-ভারত সম্পর্কের উপর এর প্রভাব পড়বে। মোদির সাথে আলোচনায়, শি চীনের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করার আগ্রহ জানিয়েছেন। কিন্তু ভারত এখনও জাতীয় নিরাপত্তার নামে চীনা কোম্পানিগুলোকে ভারতে বিনিয়োগ করা থেকে আটকে রেখেছে। চীন-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই এটা কোন উপকার করবে না। ভারত ও নেপালে শি’র সফর বিশ্বের সামনে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে: চীন দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চায়। চীন ভারতকে বন্ধুপ্রতীম দেশের মর্যাদা দিয়েছে। ভারত যদি চীনের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন করতে পারে, তাহলে সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে নিঃসন্দেহে এগিয়ে নেবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com