শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

টিকটক নিষিদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রে বিল পাশ

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪
  • ৬০ বার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ পরিষদ ‘হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস’ বুধবার এমন একটি যুগান্তকারী বিল পাশ করেছে, যার ফলে দেশটিতে জনপ্রিয় ভিডিও অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ হতে পারে।

এই বিল পাশের পর এখন জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে অ্যাপটির মালিকানা ছেড়ে দেয়ার জন্য ছয় মাস সময় বেধে দেয়া হতে পারে।

এই সময়ের মধ্যে মালিকানা হস্তান্তর করা না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ পরিষদে বিলটি বিপুল ভোটে পাশ হয়েছে। এটি আইনে পরিণত করার জন্য এখন সিনেটের অনুমোদন পেতে হবে।

সিনেট অনুমোদন দেয়ার পর বিলটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সই করবেন এবং তারপরেই এটি আইনে পরিণত হবে।

টিকটকের ওপর চীনের প্রভাব নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা অনেক দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন।

কারণ প্রতিষ্ঠানটি চীন সরকারের কাছে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপটির মূল মালিকানায় রয়েছে চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স।

বেইজিংভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে নিবন্ধিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপ জুড়ে তারা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

মার্কিন সিনেট অনুমোদন দিলে দ্রুতই বিলটিতে সই করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এর ফলে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আবারো কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টিকটকের মালিকানা ছাড়তে হলে বাইটড্যান্সকে চীনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বেইজিং।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই উল্টা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিলটি উত্থাপনকারীদের একজন হলেন রিপাবলিকান সদস্য মাইক গ্যালাগার।

তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রণ করে কিংবা তাদের মালিকানাধীন এমন কোনো প্রভাবশালী সংবাদ প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে ঝুঁকি নেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

চীনা কোম্পানিগুলো মূলত দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীন কাজ করে। এর ফলে চীনের সরকার চাইলে তাদেরকে তথ্য সরবরাহ করতে কোম্পানিগুলো বাধ্য থাকে।

যদিও টিকটকের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ কোটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য যেন সুরক্ষিত থাকে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাও জি চিউ বলেন, ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং প্ল্যাটফর্মটিকে ‘বাইরের কারসাজি থেকে মুক্ত’ রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিলটি উত্থাপনের আগে তিনি এটাও বলেন, অ্যাপটির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটি ‘মুষ্টিমেয় অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিকে আরো ক্ষমতা দেয়ার’ মতো ব্যাপার হবে।

এছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক বেকার হয়ে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করেন টিকটকের প্রধান নির্বাহী।

গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি তদন্তে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক এবং চীনের বাইটড্যান্সের মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডাটা শেয়ার করার পদ্ধতিটি ‘ত্রুটিপূর্ণ’।

এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য অরক্ষিত হয়ে পড়ছে।

এছাড়া অবস্থান অনুসন্ধানের লক্ষ্যে চীনের বাইটড্যান্স-কর্মীরা এক সাংবাদিককে টিকটকের ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডারে ঢোকার অনুমতি দিলে বিষয়টি নিয়ে আরো উদ্বেগ তৈরি হয়।

ভোটাভুটির আগে বিলটিকে স্বাগত জানান হাউসের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস।

তিনি বলেন, বিলটি টিকটক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহারের ঝুঁকি কমাবে।

মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠের নেতা চাক শুমার বলেন, সিনেট এখন আইনটি পর্যালোচনা করে দেখবে।

যদিও মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ পরিষদে শেষ পর্যন্ত বিলটির বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

কেননা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও একবার অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের অন্যতম দাতা জেফ ইয়াসের সাথে বৈঠকের পরে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন।

টিকটকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সে ইয়াসের আংশিক মালিকানা রয়েছে বলে জানা গেছে।

ট্রাম্পের বিরোধিতা বুধবার হাউসের কিছু সদস্যের মুখেও প্রতিধ্বনিত হতে দেখা গেছে।

এছাড়া ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও অনেকে টিকটক নিষিদ্ধ করার পক্ষে নেই। তারা ভয় করছেন, এই সিদ্ধান্ত তরুণ ভোটার সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কারণ টিকটকের ব্যবহারকারীদের বেশিভাগই তরুণ।

এদিকে, এই বিলের বিরোধিতা করে বুধবার হোয়াইট হাউসের বাইরে টিকটক ব্যবহারকারীদের অনেকেই বিক্ষোভ করেছেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসের এক তরুণী টিফানি বলেন, প্ল্যাটফর্মটি তার কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘১৫ বছর আগে আমি ৩০ থেকে ৪০ জনের কাছে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম।’ এখন তার লাখ লাখ ফলোয়ার রয়েছে বলে জানান।

ওফেলিয়া নিকোলস নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, টিকটকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলে মার্কিনিদের অনেকেই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তিনি বলেন, ‘যারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাদের ধিক্কার জানাই।’

আর কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মোনা সোয়াইন বলেন, টিকটক থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই তিনি তার মায়ের ঋণ পরিশোধ এবং ভাই-বোনের পড়াশোনার ব্যয় বহন করেন।

কাজেই এটি নিষিদ্ধ করা হলে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান।

টিকটক নিয়ে এর আগেও চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র এই ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপটিকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল যেন তারা চীনা কোম্পানির মালিকানা থেকে বেরিয়ে আসে। না হলে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবেই এটি নিষিদ্ধ করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল।

তখন চীন এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত টিকটককে অযৌক্তিকভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা বন্ধ করা।

এত কিছুর পরও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ব্যবহার ও বিজ্ঞাপন আয় উভয়ই উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষণা সংস্থা ইমার্কেটারের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞাপন থেকে টিকটকের আয় এক বিলিয়ন ডলারেরও কম ছিল।

কিন্তু এখন সেটি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় আট দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ইমার্কেটার।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com