রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন

নিউইয়র্কে নিজ বাসায় মায়ের সামনেই পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশী তরুণ নিহত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪
  • ৭৩ বার

যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের বাড়িতে মায়ের সামনেই পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশী তরুণ নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে নিউইয়র্ক সিটির ওজন পার্কের ১০১ অ্যাভিনিউতে নিহত উইন রোজারিওর (১৯) গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের গাজীপুরের পূবাইলে। `Police Fatally Shoot Queens Man Who Brandished Scissors, Officials Say‘ শিরোনামে খবরটি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে: উইন রোজারিও মানসিকভাবে বিষণœ ছিলেন ও গুলি করার পূর্বে সাহায্যের জন্য তিনি ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িতে পৌঁছে তারা উইনকে কাঁচি হাতে দেখতে পান। এক পর্যায়ে কাঁচি নিয়ে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে যান। এরপর পুলিশ গুলি চালালে উইন মারা যান। তবে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উইনের ১৭ বছর বয়সি ভাই উৎস রোজারিও পুলিশের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। উৎস বলেন, ‘পুরো ঘটনার সময়ই মা তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। তখন তারা তাকে টেজার দিয়ে গুলি করে। টেজার দিয়ে গুলি করার পরও আমার ভাই নিচে পড়ে যাননি। তাই, একজন পুলিশ বন্দুক বের করে তাকে গুলি করে এবং সে সময়ও আমার মা তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে গুলি করার কোন প্রয়োজন ছিল না। প্রথমত, তার বিরুদ্ধে দুইজন পুলিশ অফিসার সেখানে ছিলেন এবং আমার মা আগে থেকেই তাকে ধরে রেখেছিলেন, তাই তিনি সত্যিই কিছু করতে পারতেন না।’
পেট্রল পুলিশ বিভাগের প্রধান টহল জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘৯১১ এ মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ এক ব্যক্তির কলে সাড়া দিতে গিয়ে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ওই বাসায় যাবার পর, উইনকে তারা নিজেদের হেফাজতে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, তিনি ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে পুলিশের দিকে ছুটে যান।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু, তার মা ছেলেকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। এটি করতে গিয়ে তিনি ঘটনাক্রমে রোজারিওর শরীর থেকে টেজার সরিয়ে দেন। আর তখন উইন কাঁচি তুলে ফের অফিসারদের দিকে তেড়ে আসেন। এ পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।’
উইনকে কত বার গুলি করা হয়েছে পুলিশ তা জানায়নি। তবে, পরিবারের দাবি, তাকে ছয়টি গুলি করা হয়েছে। এ পুরো ঘটনা পুলিশের ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান চেল। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে সেই ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, দশ বছর আগে তারা সপরিবারে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন ছিল উইনের। তবে, গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তিনি বলেন, ‘উইন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গেল বছর অল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিল।’ তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে ছেলে হত্যার অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমার নিরপরাধ ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
উইনের মা ইভা ডি কস্তাা বলেন, ‘পুলিশ হলেন জনগণের সেবক। জনগণের বন্ধু। তারা জনগণের নিরাপত্তা দেন। পুলিশ তো জনগণকে মারতে পারে না। আমার ছেলে তো কোন উৎপাত করেনি। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’ উৎস বলেন, ‘উইন দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাইস্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। কিছু দিন ধরে তিনি বেশ বিষণœতার মধ্যে ছিলেন।’
গেল দুই মাসের মধ্যে নিউইয়র্কে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধদের মধ্যে উইন হচ্ছেন তৃতীয় ব্যক্তি। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীরা উইনের মৃত্যুর বিচার দাবি করেছেন। সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘মাত্র ১৯ বছরের একটি ছেলে, যার কোন অপরাধের রেকর্ড নেই, তাকে পুলিশ গুলি করে খুন করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আমরা চাই, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com