ভারতে তাবলিগি জামাতের সম্মেলন তথা দিল্লির নিজামুদ্দিন নিয়ে কম তোলপাড় হয়নি। এমনকি এক শ্রেণির মিডিয়া ও কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী করোনাকে রীতিমতো মুসলিম বানিয়ে ছেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বারাণসীতে তীর্থ করতে যাওয়া দুই মহিলা তীর্থযাত্রীর শরীরে করোনা সংক্রমিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, ওই দুই মহিলা ১২৭ জন তীর্থযাত্রীর একটি দলে ছিলেন। ফলে তাদের থেকে সংক্রমণ কোথায় কোথায় ছড়িয়েছে তা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র উদ্বেগ। তারা যে মন্দিরে গিয়েছিলেন সেই মন্দিরের পুরোহিত আবার কার কার সংস্পর্শে গিয়েছিলেন সে সব ভেবেই গভীর চিন্তায় পড়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনা ‘আর এক নিজামুদ্দিনের জন্ম দেবে না তো’?
বারাণসীর তীর্থ শেষে তিরুভঙ্কুরে ফেরা দুই মহিলা তীর্থযাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে ধরা পড়েছে। এই দুই রোগীর বর্তমানে চেন্নাইয়ের স্ট্যানলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। শুক্রবার বারাণসী থেকে তিরুভঙ্কুরে ফিরে আসা ১২৭ জনের একটি গ্রুপে এই দুই মহিলা ছিলেন। স্ট্যানলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিন ড. পি বালাজি জানিয়েছেন, পেরাম্বারের ৫৯ বছর বয়সি এক মহিলা এবং নাগপট্টিনামের অপর ৫৯ বছর বয়সি এক মহিলার দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। মহিলা দু’জন ১৫ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষণার আগে পর্যন্ত ইলাহাবাদ, কাশি ও গয়ায় তীর্থ করেছিলেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোখার জন্য কেন্দ্র ২৫ মার্চ থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে। ওই দু’জন তীর্থযাত্রী কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কাদের সঙ্গে মিশেছিলেন তার খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিরুভঙ্গুর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
চেন্নাই, পেরামবালুর ও নাগপট্টিনাম সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত তীর্থযাত্রীদের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছিল কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। শুক্রবার বারাণসীর তীর্থ শেষে তিরুভঙ্কুরে ফিরে আসা দুই মহিলা তীর্থযাত্রী কোভিড় – ১৯ ’ এর জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করেছেন। এই দুই রোগীর বর্তমানে চেন্নাইয়ের স্ট্যানলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১২৭ জন ব্যক্তি যাদের বেশিরভাগ প্রবীণ নাগরিক, বারাণসী থেকে সড়কপথে তিরুভায়ুর জেলায় পেঁৗছন। সমস্ত তীর্থযাত্রীদের তৎক্ষণাৎ আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল এবং কোভিড় – ১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়েছিল। ১৪ এপ্রিল লকডাউনের প্রথম পর্যায় শেষে ৩ মে পর্যন্ত এর সময়সীমা বাড়ানো হয়। তখনই উত্তরপ্রদেশে তীর্থ করতে গিয়ে আটকে পড়া তীর্থযাত্রীরা তাদের নিজরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায়। এই দাবিকেই মানা দিয়ে প্রশাসন তাদেরকে সড়কপথে ফেরার অনুমতি দেয়।
উল্লেখ্য, মার্চ মাসে দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীরাও দিল্লি থেকে নিজ এলাকায় ফেরার জন্য প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু দিল্লি প্রশাসন অনুমতি না দিয়ে করোনার কমিউনিটি সংক্রমণের সুযোগ করে দেয়। ফলে পরে ওই প্রোগ্রাম অংশ নেয়া বেশ কয়েকজনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এক শ্রেণির মিডিয়া এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে দেশে মুসলিমবিদ্বেষ প্রচার শুরু করে।
সূত্র : পূবের কলম