বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার দাবিতে এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে এই চিঠিটি উন্মোক্ত করা হয়। এতে প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখার জোর দাবি জানান তারা।
খোলা চিঠিতে বুয়েটের নানা আবিষ্কারের বিষয় তুলে ধরে বলেন, আমরা করোনার সেই বিপদ মুহূর্তে বানিয়েছি লো কস্ট ভ্যান্টিলেটর। ক্লিন সিটির আশায় পরিত্যক্ত মাস্ক থেকে বানিয়েছি কনক্রিট। আরো খুঁজছি বিদ্যুত উৎপাদনের সহজ উপায়। বানাচ্ছি আর্টিফিশিয়াল আর্মস। পদ্মাসেতুর নির্মাণে আমাদের বুয়েটের শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনবদ্য। শুধু দেশেই না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য দেশের দলগুলো যাদের জন্য বরাদ্দ থাকে আমাদের চেযে কয়েকগুণ বেশি অর্থ এবং গবেষণাগারের সুবিধা, তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা ছিনিয়ে আনছি বিজয়। প্রধানমন্ত্রী নিঃশর্তভাবে এসব কার্যক্রমে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে এই দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা; কিন্তু বিগত বছরগুলোতে তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই দেখেছেন উল্লেখ করে তারা বলেন, ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘাটছে আধিপত্য, দাপট, র্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মত ঘটনা। … শিক্ষার্থীদের র্যাগিং কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটে অমানসিকভাবে নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা বুয়েটের র্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিভাবক সম্বোধন করে নিজেদের মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তারা বলেন, আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। আপনি আমাদের সবার অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি দেশের কোথাও কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, দেশের কোথাও সংকট চললে, আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়।
খোলা চিঠিতে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে আরো লেখেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুপ্ত ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে, যেখানে ক্ষমতাচর্চার লোভ লালসার শিকলে আবারো জিম্মি হয়ে যাবে না সবার নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুপ্ত নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চার শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে যে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বিদ্যমান এবং এ কারণেই তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চার পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি যেকোনো মুহূর্তে এ সকল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি, শিগগিরই তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবো এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ় থাকবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ, আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সব সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন, আমরা জানি এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।