সংক্রমণ সুরক্ষা নীতি উপেক্ষা করে গাজীপুরে শনিবারও রাস্তায় নেমে দিনভর বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এসময় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পৃথকস্থানে অবরোধ করে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম, শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাড়ইপাড়া এলাকার হেচং বিডি লিমিটেড পোশাক কারখানাটি গত নভেম্বর মাসে লে-অফ ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বন্ধ ঘোষণার সময় গত অক্টোবর ও নবেম্বর মাসের বেতন ভাতাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েকদিন আগে কারখানাটি শনিবার (২৫ এপ্রিল) চালু এবং আগামী ৭মে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের তারিখ ঘোষণা করে গেইটে নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার সকাল হতে শ্রমিকরা কারখানার গেইটে এসে জড়ো হয়ে অবস্থান নিতে থাকেন।
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পরও কারখানায় মালিক পক্ষের কাউকে না পেয়ে এবং কারখানার গেইট খুলে না দেওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা তাদের ওই দু’মাসের বকেয়াসহ পাওনাদি পরিশোধ এবং কারখানা চালু করার দাবীতে গেইটে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর গিয়ে অবস্থান নেয় এবং সড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন আটকে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মালিক পক্ষের সাথে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে মহাসড়কের উপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর শ্রমিকরা কারখানার গেইটে গিয়ে অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ আলোচনার জন্য মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগের জন্য দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে রোববার সকালে আবারো কারাখানার গেইটে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিকেলে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার (লোহাই বাজার) এলাকার এটিএস সোয়েটার কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ভাতাসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে শনিবার সকাল হতে গেইটে জড়ো হতে থাকে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকেরা এক পর্যায়ে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর গিয়ে অবস্থান নেয় এবং সড়ক অবরোধ করে।
পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মালিক পক্ষ আগামী ৭মে শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দিলে বিকেলে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে কারখানা এলাকা ত্যাগ করে।
এছাড়াও একইদিন একই উপজেলার টেংরা কেওয়া বাজার এলাকার জামান ফ্যাশন নামে পোষাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে কারখানা গেইটে বিক্ষোভ করেছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা শীঘ্রই পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, গত কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ঘোষিত লকডাউন ভেঙ্গে কিছু কারখানার শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে আসছে। শনিবারও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের উদ্যোগে ইতোমধ্যে বেশ কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে জরুরি সেবার জন্য কিছু কারখানা খোলা রয়েছে। গত ১১ এপ্রিল গাজীপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।