– আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের সাথে সিরিজ বৈঠক শুরু করছে বিএনপি
ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা শরিক দল ও জোটের সাথে সিরিজ বৈঠক শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রাজনৈতিক’ ইস্যুতে সমমনাদের ডাকা হচ্ছে। আজ বিকেল ৩টায় গুলশান কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সাথে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এর সূচনা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে এই বৈঠক চলবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিক এই সিরিজ বৈঠকে শরিকদের থেকে প্রাপ্ত মতামতগুলো দলের স্থায়ী কমিটিতে পর্যালোচনা শেষে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করা হবে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এহসানুল হুদা নয়া দিগন্তকে বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে আন্দোলন চলছে, সেটা কীভাবে আরো জোরদার করা যায় সেটি নিয়ে নেতারা পরামর্শ দেবেন। এ ছাড়া একতরফা উপজেলা নির্বাচনসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ গতিপথ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বছরের অধিক সময়ব্যাপী রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। কিন্তু তাদের আন্দোলন ও বর্জনের মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগে আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনের ক্যাম্পেইন চালায় বিএনপি। দলটির দাবি, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ওই নির্বাচন বর্জন করে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির নৈতিক বিজয় এবং ক্ষমতাসীনদের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। তবে রাজপথের দীর্ঘ আন্দোলন সফল না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে দলীয়ভাবে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন শুরু করে বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি থেকে যুগপতের শরিকদের সাথে বিএনপির হাইকমান্ডের ভার্চুয়ালি সিরিজ বৈঠক হয়। যেটাকে বিএনপি ও শরিকদের পক্ষ থেকে ‘সৌজন্য বৈঠক’ বলা হয়েছিল। সেখানে সরকারি নানামুখী চাপ ও প্রলোভন সত্ত্বেও নির্বাচনে না যাওয়া এবং যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত রাখায় মিত্রদের সাধুবাদ জানানো হয়। তবে সৌজন্য বৈঠক হলেও সেখানে আন্দোলনের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে কম-বেশি আলোচনা হয়। ভবিষ্যতের স্বার্থে বিএনপিকে বিগত আন্দোলন ঠিক কী কারণে ব্যর্থ হলোÑ তার একটা যথাযথ মূল্যায়নের পরামর্শ দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ।
নির্বাচনের পর বিএনপি দলীয়ভাবে থেমে থেমে ইস্যুভিত্তিক কিছু কর্মসূচি করলেও যুগপৎভাবে কোনো কর্মসূচি এখনো মাঠে গড়ায়নি । কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিএনপির কাছে গত তিন-চার মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলের কারাবন্দী নেতাদের জামিনে মুক্ত করে আনার বিষয়টি । তা ছাড়া দীর্ঘ আন্দোলনের পর ‘ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত’ নেতাকর্মীদের বিশ্রাম দেয়াও ছিল দলটির লক্ষ্য। নির্বাচনের পর থেকে নেতাকর্মীরাও একে একে জামিনে মুক্ত হতে থাকেন। এরপর রমজানে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে সংগঠনের তৃণমূল ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এ লক্ষ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সারা দেশে পাঁচ শতাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। ইফতার মাহফিলগুলোতে দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কারামুক্ত নেতাকর্মীদের ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত করতে অনেক ইফতার মাহফিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
জানা গেছে, দলের অধিকাংশ নেতা ইতোমধ্যে কারামুক্ত হওয়ায় হতাশাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে সামনে এগুতে চায় বিএনপি। ঢাকায় গত দুই দিনে দলীয়ভাবে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে গত শনিবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করেছে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে গতকাল শনিবার একই স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে যুবদল। এখন মূল ইস্যু সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সরকারের নানা ব্যর্থতার প্রতিবাদে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার কথা ভাবছে বিএনপি। তা ছাড়া বিএনপির ওপর শরিকদের পক্ষ থেকেও কর্মসূচির চাপ রয়েছে। এতে করে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণে মিত্রদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক ডেকেছে দলটি।
জানা গেছে, আজ রোববার প্রথম দিনে ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির সাথে পৃথকভাবে বৈঠক করবে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। এ দিন বিকেল ৩টায় ১২ দল এবং বিকেল ৪টায় কর্নেল (অব:) অলি আহমদের দলের সাথে এই বৈঠক হবে। এ ছাড়া আগামীকাল সোমবার প্রথমে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং পরে লেবার পার্টির সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পর্যায়ক্রমে শরিক সব দল ও জোটের মতামত নিবে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মির্জা ফখরুলের সংবাদ সম্মেলন আজ : ছয় মাসের বেশি সময় পর আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুপুর ১২টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, গত বুধবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করবেন মহাসচিব।