মানবজাতি ধ্বংস হলে কে ডাকবে আল্লাহ? জীবন-মরণ সহায় তুমি লা শারিকালাহ।সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য হল মানব আত্মাকে মুত্তাকি করে গড়ে তোলা।
সিয়াম কীভাবে মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে? সুফি দার্শনিক ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, দুটি বিপরীত শক্তি মানুষের ভেতর কাজ করে। মানুষের মনে ফেরেশতার শক্তি যেমন আছে, আছে শয়তানি শক্তিও।
শয়তানি যে শক্তি তাকে বলে নফস। নফস শক্তিশালী হলে তখন তার কাছে ভালো ও সুন্দর কিছু মজা লাগে না। যত অসুন্দর, যত নোংরা – সবকিছু তার কাছে অমৃতের মতো মনে হয়। এ কথাই কোরআন এভাবে বলছে, ‘মানুষের ভেতর লুকিয়ে থাকা নফস যখন শক্তিশালী হয়, তখন পার্থিব জগৎ ও পাপ কাজ তার চোখে সুন্দর ও আকর্ষণীয় মনে হয়।’
আর ফেরেশতা সত্তাকে বলা হয় রুহ। রুহ যখন শক্তিশালী হয়, তখন নফস দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন কোনো খারাপ কাজ মানুষের কাছে ভালো লাগে না। এ কথাও কোরআন বলছে, ‘পৃথিবীর চাকচিক্য প্রকৃত মুমিনকে আকর্ষণ করে না।’
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, নফসের সম্পর্ক মাটির দেহের সঙ্গে। আর রুহের সম্পর্ক নুরানি সত্তা আল্লাহতায়ালার সঙ্গে। নফস চায় মাটির খাবার। মাটি থেকে উৎপন্ন খাবার খেলে নফস শক্তিশালী হয়ে ওঠে। একই খাবার খেলে আমাদের দেহও হয় পরিপুষ্ট। তখন আমাদের ভেতর কাম-ক্রোধ জেগে ওঠে। রুহের সম্পর্ক নুরানিয়াতের সঙ্গে।
সে চায় নুরের খাবার। নুরের খাবার হল ইবাদত-বন্দেগি ও কল্যাণকর কাজ। কেউ যখন খানাপিনা করে এবং ইবাদতও চালিয়ে যায়, তখন একই সঙ্গে নফস ও রুহ তাদের খাবার পায়। দুটিই শক্তিশালী হতে থাকে। কিন্তু আমরা যদি নফসের খাবার বন্ধ করে, রুহের খাবার দিতে থাকি তবে আমাদের রুহ শক্তিশালী হবে এবং নফস দুর্বল হয়ে পড়বে।
ঠিক এজন্যই আল্লাহতায়ালা সিয়াম সাধনাকে তাকওয়া অর্জনের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে বান্দা নফসকে দুর্বল করবে। আর তারাবি, তাহাজ্জুদ, দান-সদকা, ভালো কাজ করার মাধ্যমে রুহকে করবে শক্তিশালী।
এভাবে যখন একটি মাস নিয়মিত রুহ ও নফসের জেহাদে রুহ বিজয় লাভ করবে, নফস হয়ে পড়বে দুর্বল – তখন বান্দা তাকওয়ার একটি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। সিয়াম শেষ হয়ে গেলেও তাকওয়ার রেশ থেকে যাবে জীবনে। সে তাকওয়ার শক্তিতে বান্দা নিজেকে মুক্ত রাখবে সব অন্যায়-অনাচার থেকে।
আমরা সিয়াম পালন করি, কিন্তু পাপ থেকে কেন নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারি না। এর কারণ হচ্ছে, আমরা সিয়াম বলতে শুধু না খেয়ে থাকাকেই মনে করি। সিয়াম হচ্ছে জীবনভর ধরে রাখার বিষয়।
নফসকে দুর্বল করে রুহকে শক্তিশালী করলে তবেই আমরা সিয়ামকে জীবনভর ধরে রাখতে পারব। তাই আসুন, আজ থেকেই রুহকে তাজা করার সাধনা করি। হে আল্লাহ, আমাদের শুধু উপস থাকার নয়, সত্যিকারের সিয়াম পালন করার তৌফিক দিন।