মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে আজকের এই মৃত্যুপুরী বিশ্বে এখনোও আমরা বেঁচে আছি। বেঁচে আছি তাঁরই একান্ত ইচ্ছোয়। হয়তো আমাদের গুণগান ও তাঁর উপাসনা তাঁর কাছে ভালো লেগেছে তাই। লক্ষ কোটি মস্তকাবনত সিজদা তাঁর কুদরতী পায়ে, যিনি এই মহামারির বিভিষিকাময় দিনগুলোতেও আমাদেরকে তাঁর পবিত্র ইবাদত রোজাগুলো রাখার তাওফীক আমাদের দিয়েছেন। আমরা রহমতের ১০ দিন পার করে এখন পার করছি মাগফেরাতের সেই বিশেষ ১০ দিন। তারপর আসবে দোজখ থেকে পরিত্রাণের শেষ ১০ দিন। এভাবেই একে একে একদিন চলে যাবে পবিত্র মহিমান্বিত এই মাসটি। আমরা বুকভরা আশা নিয়ে রাখছি রোজাগুলো আর অপেক্ষা করছি তাঁর মহান করুণার, যা আমরা এ মাসে অনুভব করে যোগাচ্ছি আত্মার শান্তি। ইনশাল্লাহ! তাঁরই দয়ায় তিনি মহামারি করোনার এই গজবকেও আমাদের থেকে উঠিয়ে নিয়ে আমাদেরকে আবারো আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরিয়ে নিবেন।
রামাদানের দিনগুলো যত গড়াচ্ছে, সোসাল মিডিয়া খুললেই শুধু দেখছি জাকাত জাকাত আর জাকাতের প্রচার। এমনকি যেসব মসজিদ কর্তৃপক্ষ করোনা মহামারির এই দুর্দিনে তাদের মুসল্লিদের, যারা বছর ভরে মসজিদে মোটা মোটা অংকের অনুদান করে এসেছেন, তাদেরকে যুগোপযোগী কোন সেবা প্রদান করতে পারেন নাই, তারাও সোসাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাচ্ছেন ডোনেশান। মসজিদ এখন বন্ধ, কিন্তু যখন খোলা ছিল ঈদের নামাজে কালেকশান হওয়া হাজার হাজার জাকাত-ফেতরার ডলার পরোক্ষভাবে করেছেন লুট। হয়েছে কত হানাবানি। তবুও তারাও চাচ্ছেন জাকাত-ফেতরা। ফোন খুললেই ভেসে আসে অনলাইনে জাকাত-ফেতরা চাওয়ার এত সংস্থা…, যা দেখে যে কেহ রীতিমত হবে অবাক। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এদের প্রায় ৯০% ভাগই ভুয়া ও ব্যবসায়ী। উপযুক্ত লোকদের না দিয়ে কিংবা স্বল্প মাত্রায় দিয়ে সংস্থার লোকজনই তাদের বেতন ও বোনাস হিসেবে ভাগ-বাটোয়ারা করেই নিচ্ছেন অনলাইনে কালেকশান করা বিরাট অংকের এ পয়সাগুলো। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে সরলমনা ক্রেডিট কার্ডে দাতাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও কার্ড ইনফোরমেশান নিয়ে চতুরতা করারও অনেক অভিযোগ রয়েছে।
আসুন, এবার দেখি জাকাত-ফেরতা কি? উত্তর আমেরিকায় তা কত এবং কাকে দিলে ঠিকমত তা আদায় করা হবে।
রামাদান এবং কোরান যেভাবে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত, ঠিক তদ্রূপ রামাদান ও জাকাত অঙ্গাঅঙ্গি ভাবেই জড়িত। আমরা আগেই জেনেছি যে, মাহে রামাদানের একটি ফরজ আমল আদায় করার সাওয়াব অন্যান্য মাসের ৭০ টি ফরজ আদায় করার সমান সাওয়াব। তাই ৭০% বেশী সাওয়াব পেতে ও চান্দ্র মাসের সহজ হিসেব রাখতে মাহে রামাদানকেই জাকাত আদায়ের মাস হিসেবে বেঁচে নেয়া হয়েছে। জাকাত ইসলামের ৫ম স্তম্ভ। যা পবিত্র কেরানের সূরা তাওবার ১০৩ নং আয়াতের ভিত্তিতে ফরজ করা হয়েছে। জাকাত শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো পবিত্র করা।
যার বা যাদের নিকট বিশেষ পরিমাণ সম্পদ ও স্বর্ণালংকার থাকবে, তার বা তাদের উপরই জাকাত ফরজ।
উত্তর আমেরিকায় আপনার উপর জাকাত ফরজ কিনা তার নমুনা নির্ধারণ করতে হলে দেখতে হবে আপনার নিকট নিসাব পরিমাণ স্বর্ণালংকার বা সম পরিমাণ অর্থ পুরো একটি চান্দ্র বৎসর আপনার নিকটে বা ব্যাংক একাউন্টে জমা ছিল এবং এখন আছে কিনা!?
আমরা সবাই জানি, নেসাব হলো ৭.৫ তোলা বা তার চেয়ে বেশী সোনা বা স্বর্ণালংকার অথবা ৭.৫ তোলা সোনার দামের সম পরিমাণ অর্থ পুরো একটি চান্দ্র বৎসর যার মালিকানায় ছিল ও আছে, তাকে বর্তমানে স্বর্ণের মার্কিন বাজার দর ধরেই ২.৫ % হিসেবেই জাকাত আদায় করতে হবে। ৭.৫ তোলা সোনার গ্রাম ওজন হলো ৮৭.৭। প্রতি গ্রাম সোনার বর্তমান ( ১৫ই মে, ২০২০) মার্কিন বাজার মূল্য হলো ৫৪.৭৫ ইউএস ডলার। সেজন্য ৭.৫ তোলা সোনার গ্রাম দাম ৪,৭৯০ ডলার। যা আপনার নিসাবও বটে। অর্থাৎ এই পরিমাণ বা তদুর্ধ ডলার যদি আপনার ব্যাংক একাউন্টে বা আপনার কাছে পুরো একটি চান্দ্র বছর ছিল ও আছে, তখন তার ২.৫% আপনাকে জাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। ডায়মন্ড ও নিজের ব্যবহার্য্য ঘর বা জিনিষ পত্রের উপর জাকাত দিতে হয়না।
ফেতরা: জাকাতের জন্য নেসাব হওয়া প্রয়োজন, পক্ষান্তরে ফেতরা আদায় করার জন্য মোটামোটি পারিবারিক স্বচ্ছলতা প্রয়োজন। হাদীস গ্রন্থ আবূ দাউদের একটি হাদীসের সূত্র ধরে রোজার ফেতরা ইসলামী শরীয়তে ওয়াজেব করা হয়েছে।
নবীজী বলেছেন, রোজাদার ফেতরা আদায় না করা পর্যন্ত তার রোজা আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলে থাকে।
তাছাডা, সতর্ক থাকা সত্ত্বেও রোজাদারের যদি কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হয়ে যায়, ফেতরা প্রদানের বিনিময়ে মহান আল্লাহ ঐ বান্দার পক্ষে তার রোজাকে শুদ্ধ হিসেবেই গ্রগণ করেন।
উত্তর আমেরিকায় একজন স্বচ্ছল পরিবার কর্তা প্রতিজন (ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ভূমিষ্ট হওয়া শিশু সহ ) পরিবারের সদস্যের পক্ষ থেকে জনপ্রতি এবার ১৫ ডলার করে ফেতরা আদায় করবেন। ১৫ রামাদান থেকে সাধারণত শুরু করে অবশ্যই ঈদের দিন নামাজের আগে আগে তা আদায় করতে হবে।
জাকাত ও ফেতরা সম্মন্ধে বিস্তারিত জানতে এবং মোহাম্মদী সেন্টারের জাকাত-ফেতরা ফান্ডে তা ড্রাপ বা পিকআপের জন্য এই নাম্বারে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
(718) 496-9377.
মোহাম্মদী সেন্টােরের লাইভ এফবি তারাবী শুরু হয় প্রতিদিন নিউইয়র্ক সময় রাত ১০:০০ টায়, জুমুআ প্রতি শুক্রবার দুপুর ২:০০ টায়। নিউইয়র্ক ঈদগাহর ঈদের একটি মাত্র জামাত এফবি লাইভে অনুষ্ঠিত হবে আগামী রোববার, ২৪শে মে, ২০২০ সকাল ৯:৩০ টায়, (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ইনশাল্লাহ)
যেহেতু ৩০শে জুন পর্যন্ত নিউইয়র্ক ঈদগাহ ভেন্যু জ্যাকসনহাইটস ডাইভার্সিটি প্লাজা সহ খোলা আকাশের নিচে ঈদ জামাতের সকল পার্মিট নিউইয়র্ক মেয়র অফিস
বাতিল করেছেন, তাই ঈদের দিন মোহাম্মদী সেন্টার থেকে ভার্চ্যুয়াল লাইভ ঈদ জামাত পরিচালনা করা হবে, যাতে পরিবারের সদস্য সহ ঘর থেকেই সবাই তাতে এফবি আইডি Imam Qazi Qayyoom খুলে সরাসরি তাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
সবাইকে মাহে রামাদান ও ঈদুল ফেতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।