মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের উপস্থিতিতে আরব নেতাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে। আর এর ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা যে পরিকল্পনা করছে, তা বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় এক মাস আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন সিনিয়র আরব নেতাদের একটি গ্রুপ। আর সেখানেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক সিনিয়র উপদেষ্টার মধ্যে তীব্র কথা কাটাকাটি হয়। ওই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যক্তি বিষয়টি জানিয়েছেন।
সূত্রগুলো জানায়, এর ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত সংস্কার নিয়ে আবর দুনিয়ার মধ্যে বিভাজন সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। একইসাথে গাজা যুদ্ধের পর জো বাইডেন প্রশাসন যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে পরিকল্পনা করছে, সেগুলোর বাস্তবায়নও কঠিন করে তুলবে।
জানা গেছে, ওই সভাটি হয়েছিল ২৯ এপ্রিল, রিয়াদে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সম্মেলনের ফাঁকে তা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল গাজা যুদ্ধের পর অভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা।
ব্লিনকেন ছাড়াও সভায় সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান, কাতার, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া ফিলিস্তিনি মন্ত্রী হোসেইন আল-শেখও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি হলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা।
সূত্র জানায়, সভায় আল-শেখ বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব দেশগুলোর অনুরোধ অনুযায়ী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার চালিয়েছে, নতুন সরকার গঠন করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা পাননি।
সভার শেষ পর্যায়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সংস্কার করেনি বলেই তার মনে হয়।
এই পর্যায়ে আমিরাতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে ‘আলী বাবা ও ৪০ চোর’ হিসেবে অভিহিত করে দাবি করেন যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সিনিয়র কর্মকর্তারা ’অথর্ব’ এবং এ কারণে ‘এদের প্রত্যেককে যদি বদলানো হয়, তবুও কাজ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের সংস্কার না করলে সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আর্থিক সহায়তা দেবে?’
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আল-শেখ চিৎকার করে আমিরাতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কিভাবে সংস্কার করবে, সে ব্যাপারে কেউ নির্দেশনা দিতে পারে না।
সূত্রগুলো জানান, এই পর্যায়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় থামানোর চেষ্টা করে বলেন, সংস্কারে সময় লাগে।
কিন্তু সভা ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। উভয় পক্ষ এতে অপরের দিকে চিৎকার করে কথা বলতে থাকেন। তখন আমিরাতি মন্ত্রী রাগে সভা ত্যাগ করেন।
তখন জর্ডানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদিও সভা ত্যাগ করেন। তবে কয়েক মিনিট পর আমিরাতি মন্ত্রীকে নিয়ে সভায় ফিরে আসেন। আমিরাতি মন্ত্রী ব্লিনকেনের সামনে ঝগড়া হওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেন।
আমিরাতি মন্ত্রী এরপর বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের সাথে যতটা নিরাপত্তাগত সমন্বয়ের কাজ করে, ততটা যদি তার অধিবাসীদের দিকে মনোযোগী হতে, তবে ফিলিস্তিনিদের অবস্থা আরো ভালো হতো।
এ ব্যাপারে আল-শেখ এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ফিলিস্তিনি কতৃপেক্ষর মধ্যকার উত্তেজনা একইসাথে ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক। অনেক বছর ধরেই আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের সাথে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বিবাদ চলছে।
বিন জায়েদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হলেন মোহাম্মদ দাহলান। তিনি আব্বাসের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। আর এ নিয়ে আমিরাতের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন আব্বাস। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত অনেক বছর ধরেই আব্বাস এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে। আবার ২০২০ সালে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় আমিরাত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলে আসছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোস্তফাকে পছন্দ করে না আমিরাত। তাদের মতে, মোস্তফা হলেন আব্বাসের সহযোগী। আমিরাত আব্বাসের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী সালাম ফায়াদকে ওই পদে দেখতে চায়।
সূত্র : জেরুসালেম পোস্ট