নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতিতে কেউ লাশ ধরছে না। ফলে দাফন-কাফন নিয়ে মহাবিপদে পড়ে যায় সংশ্লিষ্ট পরিবার। এমন বিপর্যয়কর সময়ে লাশের গোসল, জানাযা দাফন-কাফন এগিয়ে এলেন কিছু লোক। এসেই মৃতের পরিবারকে বললেন, “আমাদেরকে লাশ বুঝিয়ে দিন। হোক সে করোনা রোগী বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত। গোসল থেকে শুরু করে জানাযা, দাফন-কাফন সব আমরা করে দেব। কোনো বিনিময় দিতে চাইলে আমরা নেই। বিনিময় আমার আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে নেব। এভাবেই ‘এহসান পরিবার’ নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে এ পর্যন্ত ২৬টি লাশ দাফন করেছে। এর মধ্যে একজন হিন্দু ব্যক্তির সৎকারও করেছেন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
তারা বলেন, করোনার আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিও সংক্রমিত হতে পারেন ভয়ে এমনকি ঘনিষ্ঠ স্বজনরাও পিছিয়ে যান। কিন্তু আল্লাহর রহমতে, আমরা ২৬টি লাশ দাফন ও অন্যান্য কাজ করলেও কেউ অসুস্থ হইনি। আমরা সবাই ভালো আছি।
ইতোমধ্যে “এহসানপরিবার” নামে একটি ফেসবুক পেজ জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীররা করোনার প্রথম থেকেই শহরের ভাসমানদের রান্না করা খাবার বিতরণ, দুস্থ ও গরিবদের মধ্যে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ বিনামূল্যে শিশুখাদ্য দুধ পৌছে দিত, যা এখনো চলমান। তাদের ফেসবুকে দেখা যায়, মানুষের কল্যাণে নানা স্বেচ্ছা কর্মের ভিডিওফুটেজ ও ছবি।
সংগঠনের জিম্মাদার নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আনোয়ার হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতির প্রথম দিকে মার্চ মাসে “এহসান পরিবার”নামে একটি স্বেচ্ছসেবী সংগঠন করে আমরা প্রায় ১১ দিন ধরে জেলায় ভাসমানদের মধ্যে ৩ শ’ প্যাকেট করা রান্না খাবার বিতরণ করেছি। আমরা নানা সংগঠনের পেশাজীবি ও ব্যবসায়ী নিজেরাই অুনদান দিয়ে সংগঠন কার্যক্রম শুরু করি। এরই মধ্যে জেলায় করোনায় মারা গেলে মানুষ লাশ ধরতে এগিয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে কেউ করোনাসহ নানা ব্যাধিতে মারা গেলে বিনা পারিশ্রমিকে লাশের সকল কর্ম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেই। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ৭ মে পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা ২৬ টিলাশ কবরস্থ করে। এর মধ্যে একজন হিন্দুও রয়েছে। তার সৎকারের ব্যবস্থা করি ।
তিনি জানান, আমরা এ পর্যন্ত যে লাশগুলো দাফন করেছি তার তালিকা নিচে দেয়া হলো-
মরহুম মজিবুর রহমান চুন্নু, বন্দর উপজেলা, হুময়ুনের বোন, আমলাপাড়া, আজিজুল হক(৮০), আমলাপাড়া শফিউল্লাহ (৬৫) আফাজনগর, ফতুল্লা, জালালউদ্দিন (৫৫), মাসদাইর, ফতুল্লা, মফিজুর রহমান, মাসদাইর, ফতুল্লা, আয়শা আক্তার, জামতলা, বাদল চন্দ্র, আমলাপাড়া, কোহিনূর বেগম, গাইনী ডাক্তার মিনার শিকদারের মা করোনা রোগী, মোনায়ারা বেগম (৫৭), ইসদাইর, ফতুল্লা, আব্দুল মালেক (৬৫),আফাজনগর, ফতুল্লা আসাদ (৫৫) হাসেনপুর, সোনারগাঁ, সোলেমান (৬৫) খানপুর, শহর, হুময়ান আহমেদ, আমলাপাড়া, মো: শুক্কুর আলী মাতব্বর, কায়েমপুর, ফতুল্লা, মাওলানা শামসুল আলম (৮০), বন্দর, ইব্রাহীম মোল্লা, রূপগঞ্জ, মো: সেলিম, ইসদাইর, ফতুল্লা, মাওলানা মকবুল হোসেন জিহাদী, উত্তর মাসদাইর, ফতুল্লা নূরুল ইসলাম (৮৫), ইসদাইর ফতুল্লা, মামুন পাইকের মা, মাসদাইর কবরস্থান, ফতুল্লা, আক্তার হোসেন, শাসনগাও, ডাক্তার এমদাদুল হক, কেরানীগঞ্জ, আবুল হাশেম (৬৫) মাসদাইর, ফতুল্লা, অজ্ঞাত পশ্চিম মাসদাইর ও রমজান আলী, ফতুল্লা পৌষা পুকুরপাড়।