শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

রিজার্ভ আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা

সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪
  • ৮০ বার

উন্নত বিশ্বে বিদ্যমান উচ্চ সুদের হার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলোতে এই উচ্চ সুদের হার আগামীতে অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো কঠিন হতে পারে। একই সাথে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিরাজমান উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগের গতি শ্লথ করে প্রভাব ফেলতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। অর্থ বিভাগের করা এক নীতি বিবৃতিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে আটটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় কৌশলও নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। দেশের অর্থনীতি খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি। বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার মুদ্রা ও রাজস্ব নীতিতে বেশ কিছু সমন্বয় সাধন করে কৌশল প্রণয়ন করেছে। কঠোর মুদ্রা ও ব্যয় সঙ্কোচন নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। বছর শেষে মূল্যস্ফীতির গড় হচ্ছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এ দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পূর্বাভাস মতে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।

অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, মধ্য মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং যথাযথ মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি গ্রহণের ফলে দেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে মধ্য মেয়াদে বহিঃখাতের চলকগুলোরও ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। প্রবাস আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ অব্যাহত থাকলে তা ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় পুনরুজ্জীবিত করতে অবদান রাখবে এবং একই সাথে সরকারি বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে বর্তমান উচ্চ সুদের হারের কারণে স্বল্প মেয়াদে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। আর এতে সামগ্রিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।

অর্থ বিভাগ বলছে, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক নয়। দেশের কর আদায় বাড়াতে সংস্কার এবং নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নন-পারফর্মিং ঋণ (এনপিএল) তথা খেলাপি ঋণ আদায় এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কিছু ব্যাংক একত্রীকরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এ প্রক্রিয়াটির সুফল পেতে সময় লাগবে।

অর্থ বিভাগ জানায়, আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশ কিছু সুবিধা কমে যাবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রফতানি বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
অর্থনৈতিক খাতে চ্যালেঞ্জেগুলোর মধ্যে অর্থ বিভাগের মতে আরো রয়েছে, গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (বিশ্ব জলবায়ুঝুঁকি সূচক) ২০২১ অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করতে পারে। এমতাবস্থায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় উপায় খুঁজে বের করার জন্য সঠিক বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com