ইসরাইলের সেনাপ্রধান বুধবার তার সৈন্যদের বলেছেন, তারা যেন লেবাননে সম্ভাব্য স্থল হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত থাকে। এরই মধ্যে ইসরাইলের জঙ্গি বিমানগুলো পর পর তৃতীয় দিনের মতো হিজবুল্লাহর সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর বোমা বর্ষণ করেছে।
সামরিক বাহিনীর প্রকাশিত একটি বিবৃতি অনুযায়ী লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালাভি ট্যাংক ব্রিগেডকে বলেন, ‘আপনারা এখানে বিমানের শব্দ শুনতে পারছেন; আমরা সারাদিনই আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছি, আপনাদের প্রবেশের সম্ভাবনা তৈরির জন্য যেমন তেমনি হিজবুল্লাহর উপর আঘাত হানা অব্যাহত রাখার জন্য।’
হালেভি বলেন, ‘আমরা থামছি না । আমরা তাদের উপর আক্রমণ চালানো এবং সর্বত্র তাদের ক্ষতি সাধন অব্যাহত রাখবো। আর সে জন্য আমরা অনুশীলন করে যাচ্ছি এবং বিষয়টা হচ্ছে আপনাদের সামরিক বুট জুতা, আপনাদের এই অনুশীলনের বুট জুতা শত্রুর অঞ্চলে প্রবেশ করবে।’
তেল আবিবের কাছে ইসরাইলের মোসাদ গোয়েন্দা দফতরকে লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহ একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কয়েক ঘণ্টা আগে সেনাপ্রধান তার সৈন্যদের উদ্দেশে কথা বলেন। ইসরাইল গুলি করে ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করে তবে হালেভি সতর্ক করে দেন, ‘আজ হিজবুল্লাহ তাদের গুলি করার পরিধি বাড়িয়েছে এবং আজই আরো পরে তারা কড়া জবাব পাবে। আপনারা তৈরি থাকুন।’
ইসরাইল আরো বলেছে, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ সদস্যদের বিরুদ্ধে লড়তে তারা তাদের রিজার্ভ বাহিনীকে সক্রিয় করেছে। লেবাননের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, ইসরাইলি আঘাতে বুধবার ৫০ জন নিহত হয়েছে । এর ফলে তিন দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৫। এবং আহত হয়েছে দু’হাজারে বেশি মানুষ।
ইসরাইলি সতর্ক বার্তা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনে কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো সময় আছে উত্তেজ
না কমিয়ে আনার এবং কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেয়ার।
পেন্টাগনের উপ-প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিংকে যখন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের বড় রকমের স্থল আক্রমণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে না শিগগিরই কিছু ঘটবে।’
বুধবার সংবাদদাতাদের সিং বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে আমরা যা দেখছি তা হলো পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা বৃদ্ধি, ইসরাইল ও লেবাননি হিজবুল্লাহর মধ্যে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ। আমরা এখনো মনে করি যে কূটনীতির জায়গা ও সময় দুটিই আছে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে ‘হিসাবের গন্ডগোল হলে এবং ভুল পদক্ষেপ নিলে সংঘর্ষটি আরো বড় আকার ধারণ করতে পারে, আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’
বুধবার এবিসি’র টক শো ‘দ্য ভিউ’ তে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যা ভাবছি তা হলো, নিস্পত্তি করার সুযোগ এখনো রয়েছে, যা মৌলিক ভাবে গোটা অঞ্চলকেই বদলে ফেলতে পারে।’
পেন্টাগন অস্ত্র বিরতি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পুরোদমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
সিং বলেন, ‘আমরা একটি কূটনৈতিক সমাধান দেখতে চাই এবং আমরা তা চাই দ্রুত।’ তিনি আরো বলেন যে লেবাননে অভিযান চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে কোনোরকম গোয়েন্দা বা সামরিক সহায়তা দিচ্ছে না।
জাতিসঙ্ঘ বলেছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি আক্রমণের কারণে ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছে, অনেকেই বৈরুতের উত্তরে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। অবশ্য ইসরাইলি জেটগুলোর লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রাজধানীর কিছু এলাকাও রয়েছে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে কয়েক ডজন অস্ত্রাগার । তারা আরো বলে যে হিজবুল্লাহর নিক্ষিপ্ত ৪০টি রকেট সনাক্ত করা গেছে এবং কয়েকটিতে বাধা প্রয়োগ করে ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ইসরাইল লেবানন সীমান্ত বরাবর এই ক্রবর্ধমান সংঘাত নিউ ইয়র্কে বুধবার রাতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান আলোচ্য বিষয় হবার কথা।
বুধবার পোপ ফ্রান্সিস বলেন, তিনি লেবাননের পরিস্থিতিতে দুঃখ বোধ করছেন। তার কথায় ‘এই মারাত্মক ভাবে পরিস্থিতির অবনতি’ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাজ করতে হবে।
এই লড়াই নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ব্যাপকতর আঞ্চলিক সংঘাত যাতে না ঘটে তার জন্য যে সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রঁর সাথে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের বৈঠক। ম্যাক্রঁর দফতর জানায় যে তিনি ‘সাধারণভাবে উত্তেজনা হ্রাস করতে এবং যারা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে তাদের উপর প্রভাব’ খাটাতে ইরানের দায়িত্বের কথা জোর দিয়ে বলেছেন।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা