বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

রাষ্ট্রহীন কুর্দিদের অন্ত:হীন সংগ্রাম…?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩৪১ বার

আন্দালিব আয়ান: কুর্দিদের বিতাড়িত করে নিরাপদ অঞ্চল গড়তে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনা করছে তুরস্কের সেনাবাহিনী। বলা হচ্ছে, নিজেদের সৈন্য সরিয়ে কুর্দিদের ওপর এমন হামলার সুযোগ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে আইএস বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সহযোগী ছিল কুর্দিরাই। স্বাধীনতার জন্য রাষ্ট্রবিহীন এই জাতিটির রয়েছে এক দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসও। লিখেছেন আন্দালিব আয়ান
কুর্দিদের পরিচয়: কুর্দিদের বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রবিহীন জাতি। মধ্যপ্রাচ্যে আরব, তুর্কি এবং পারসিয়ানদের পরই কুর্দিরা চতুর্থ বৃহৎ জাতিগোষ্ঠী। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। অথচ এদের নিজেদের কোনো দেশ নেই। যে অঞ্চলে তারা বাস করে সেই অঞ্চলটিকে বলা হয় কুর্দিস্তান। এটি স্বাধীন কোনো দেশ নয়। এই অঞ্চলের কিছু অংশ তুরস্কের সীমানার মধ্যে, কিছুটা সিরিয়া, কিছুটা ইরান এবং বাকি অংশ ইরাক ও আর্মেনিয়ায় মধ্যে পড়েছে। বহু বছর ধরে একটি স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেও ভাগ্য তাদের কখনই সুপ্রসন্ন হয়নি। বৃহৎ জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে ভাগ হয়ে এরা সংখ্যালঘুর জীবন যাপন করছে। ভৌগোলিকভাবে কুর্দিস্তান অঞ্চলটি জগ্রোস পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিম অংশ এবং তোরোস পর্বতমালার পূর্বাংশ নিয়ে গঠিত। এছাড়া আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সামান্য কিছু এলাকাকেও কুর্দিস্তানের অন্তর্গত বলে গণ্য করা হয়। পাশাপাশি পাঁচটি দেশজুড়ে বিস্তৃত হলেও ধর্মীয়, ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে কুর্দিরা মূলত একই জাতি। কুর্দিদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলিম। অঞ্চলভেদে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা। অন্যদের থেকে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে তারা স্বতন্ত্র একটি বেদুইন জাতি।
ঐতিহাসিক পটভূমি: সেলজুক সুলতান সাঞ্জার সর্বপ্রথম দ্বাদশ শতকে কুর্দিস্তান নামটি সরকারিভাবে ব্যবহার করেন। তিনি এই কুর্দিস্তানকে একটি প্রদেশের মর্যাদা দেন এবং এর রাজধানী নির্ধারণ করেন বাহার শহরকে। সেলজুকদের পর এই অঞ্চলের ক্ষমতা চলে যায় অটোমানদের হাতে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে পতনের আগ পর্যন্ত কুর্দিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের। অটোমানদের দক্ষ সেনাবাহিনী কঠোরভাবে শাসন করত এই অঞ্চলটিকে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯২০ সালের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে অন্যদের মতো কুর্দিরাও তাদের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ সময় পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তুরস্কের সঙ্গে সেভরা চুক্তির মাধ্যমে গণভোটের ভিত্তিতে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু এই চুক্তি ব্যর্থ হয়। পরে ১৯২৩ সালে লুসান চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ককে স্বাধীনতা দেওয়া হয় এবং এই চুক্তির মাধ্যমে কুর্দিদের গণভোটের বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা হয়। ফলে আবারও চাপা পড়ে যায় কুর্দিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন। ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের হস্তক্ষেপে কুর্দিস্তানকে ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত সাইকস-পিকো চুক্তির মাধ্যমে ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। যারা তুরস্কে আছে তাদের তুর্কি কুর্দি, যারা ইরাকে তাদের ইরাকি কুর্দি, যারা ইরানে তাদের ইরানি কুর্দি এবং যারা সিরিয়ায় আছে তাদের সিরীয় কুর্দি পরিচয় বহন করতে হয়। এই ভাগ হয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছর ধরে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য কুর্দিদের নেওয়া প্রত্যেকটি প্রচেষ্টাকেই নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছে কুর্দিস্তান নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলো। প্রত্যেকটি দেশে এখন তারা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী।
সবচেয়ে বেশি কুর্দি তুরস্কে: ১৯২৩ সালে কুর্দিস্তানকে চার দেশ ভাগ করে নেওয়ার পর সবচেয়ে বেশি কুর্দির ঠাঁই হয় তুরস্কে। বর্তমানে তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশই কুর্দি। ভাগ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তুর্কি কুর্দিরা তাদের স্বাধীনতার আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। যদিও শুরু থেকেই কুর্দিদের কঠোর হস্তে দমন করে আসছে তুরস্ক। এমনকি জোর করে তাদের কুর্দি পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কুর্দি নাম, পোশাক ও ভাষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তাদের ওপর তুর্কি পরিচয় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। এক সময় তাদের বলা হতো পাহাড়ি তুর্কি।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত কুর্দিদের মাতৃভাষা তুরস্কে নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ ওচালানের নেতৃত্বে পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে কুর্দিরা গড়ে তোলে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ সালে তুর্কিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করে পিকেকে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং পাশাপাশি ঘরবাড়ি হারিয়েছে লাখ লাখ কুর্দি। বৃহৎ শক্তি তুরস্কের বিরুদ্ধে কুর্দিদের সশস্ত্র বিপ্লব কখনই সফলতার মুখ দেখেনি। উল্টো পিকেকে’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয় তুরস্ক।
১৯৯০ সালের পর স্বাধীনতার স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে কুর্দিদের। এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার আশা বাদ দিয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে তারা। ২০১৩ সালে গোপন আলোচনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় দুই পক্ষ। এই যুদ্ধবিরতি অকার্যকর হয়ে পড়ে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। সে সময় সিরিয়ার সীমান্তের কাছে কুর্দি অধ্যুষিত শহর সুরুকে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩৩ জন তরুণ কুর্দি অ্যাক্টিভিস্ট নিহত হয়। ধারণা করা হয়, এই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা। আর এই হামলায় সহায়তা করে তুরস্ক। ফলে তুরস্কের সেনাবাহিনী এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায় পিকেকে। এর জবাবে একই সঙ্গে পিকেকে এবং আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমন্বিত যুদ্ধ’ বলে চালানো ওই অভিযানে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। ২০১৬ সালে ওই অঞ্চলের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার অংশেও বিপুল সংখ্যক সেনা ও ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে জারাব্লুস শহর দখল করে নেয় তুর্কি বাহিনী। সিরিয়ান কুর্দি বিদ্রোহী বাহিনী ওয়াইপিজি’র নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স ওই অঞ্চলের দখল নিতে ব্যর্থ হয়। ২০১৮ সালে তুরস্কের বাহিনী এবং সিরিয়ান বিদ্রোহীদের সাহায্য নিয়ে সিরিয়ার আফ্রিন থেকেও ওয়াইপিজি’র যোদ্ধাদের উৎখাত করে। তুরস্ক দাবি করে, সিরিয়ার ওয়াইপিজি এবং পিওয়াইডি তুর্কি সীমান্তের ভেতর পিকেকে’র সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এগিয়ে আছে ইরাকি কুর্দিরা: ইরাকি কুর্দিদের অবস্থা অন্যদের তুলনায় কিছুটা ভালো। ইরাকের জনসংখ্যার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ ভাগ কুর্দি। অন্যদেশে অবস্থান করা কুর্দিদের চেয়ে বেশি নাগরিক অধিকার এবং সুবিধা ভোগ করেছে তারা। এর জন্য তাদের লড়াই-সংগ্রামও করতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ১৯২৩ সালে তারা ইরাকিদের অধীনে যাওয়ার পর সাবেক কুর্দি গভর্নর শেখ মাহমুদ বারিজিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন। তিনি ইরাকের সুলায়মানিয়াতে কুর্দি রাজতন্ত্র ঘোষণা করেন। পরে ব্রিটিশরা তাকে পরাজিত করে সুলায়মানিয়া দখল করে নেয়।
১৯৪৬ সালে ইরাকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে মুস্তাফা বাজরানির নেতৃত্বে গঠিত হয় কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (কেডিপি)। তাদের আন্দোলনের মুখে ইরাকের নতুন সংবিধানে কুর্দিদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও নাকচ করে দেওয়া হয় স্বায়ত্তশাসনের দাবি। ফলে ১৯৬১ সাল থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে কেডিপি। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে মধ্য ও দক্ষিণ ইরাকের মানুষকে পুনর্বাসন শুরু করে সরকার। বিশেষ করে তেলসমৃদ্ধ কিরকুক অঞ্চলের লাখ লাখ কুর্দিকে বিতাড়িত করা হয় সে সময়।
কুর্দিদের ওপর ইরাকি সরকারের নির্মম নির্যাতন নেমে আসে আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধে থাকা কুর্দিরা সে সময় ইরানকে সমর্থন দেয়। এর প্রতিশোধ হিসেবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশে কুর্দিদের কয়েক হাজার গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৮৮ ইরাকের হালাবিয়া শহরে কুর্দিদের ওপর রাসায়নিক গ্যাস হামলারও অভিযোগ ওঠে সাদ্দামের বিরুদ্ধে। এই হামলায় প্রায় ৫০ হাজার কুর্দি নিহত হয়।
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাক পরাজিত হলে কুর্দি বিদ্রোহীরা বাগদাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে। ওই বিদ্রোহ দমনে ইরাকি র্কর্তৃপক্ষের নেওয়া সহিংস পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোট উত্তরে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করে যার ফলে কুর্দিরা সেসব অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
২০০৩ সালে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণকে সমর্থন করে কুর্দিরা। এর দুই বছর পর উত্তর ইরাকের তিনটি প্রদেশে কুর্দিস্তান রিজিওনাল গভর্নমেন্ট (কেআরজি) প্রতিষ্ঠা করে সেসব এলাকার জোট সরকারের অংশ হয়।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কুর্দিস্তান অঞ্চল এবং ২০১৪ সালে কুর্দি মিলিশিয়াদের দখল করা বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর মানুষ একটি গণভোটে অংশ নেয়। সে সময় ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার এই গণভোটকে অবৈধ দাবি করে এর বিরোধিতা করে। গণভোটে ৯২ শতাংশ কুর্দি স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার এই গণভোটকে অবৈধ আখ্যা দেয়। তুরস্ক ও ইরানও ওই গণভোটের বিপক্ষে কথা বলে। পরের মাসে ইরাকের সরকার সমর্থক বাহিনী কুর্দিদের দখলে থাকা বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর দখল নেয়। এভাবে বর্তমানে ইরাকি কুর্দিদের স্বাধীনতার প্রশ্নও আটকে গেছে। তাদের স্বাধীনতা প্রশ্নে নীরব ছিল জাতিসংঘসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশ।
সিরিয়ার কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন নাকচ: সিরিয়ার কুর্দিরাও দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারিত এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশটির জনসংখ্যার ৭ থেকে ১০ ভাগ কুর্দি। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার আগে তাদের অধিকাংশের বাস ছিল দামেস্ক এবং আলেপ্পোতে। এছাড়াও উত্তর-পূর্বের শহর কামিশলি, কোবানে এবং আফ্রিন শহরেও তাদের কিছু অংশ বসবাস করত। সিরিয়ায় ১৯৬০-এর দশক থেকে প্রায় ৩ লাখ কুর্দিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি এবং তাদের জমি অধিগ্রহণ করে আরবদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে হওয়া অভ্যুত্থান যখন গৃহযুদ্ধে পরিণত হয় তখন প্রধান কুর্দি দলগুলো কোনো পক্ষ নেয়নি। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশের অন্যান্য জায়গায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য সেসব কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়, যার ফলে কুর্দি দলগুলো সেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রভাবশালী ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি (ওয়াইপিডি)-সহ অন্য কুর্দি দলগুলো আফ্রিন, কোবানে এবং জাযিরার তিনটি বিভক্ত প্রদেশে ‘স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন’ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেয়। ২০১৬ সালের মার্চে তারা আইএস-এর দখলে থাকা কয়েকটি আরব এবং তুর্কি এলাকা নিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সিরিয়ার সরকার, সিরিয়ার বিরোধী দল, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র। পিওয়াইডির দাবি, তারা স্বাধীনতা চায় না, কিন্তু সিরিয়ায় চলমান সংঘাত নিরসনের উদ্দেশে নেওয়া যে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতায় কুর্দিদের অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি যেন গুরুত্ব পায় তা নিশ্চিত করতে চায়। যদিও তাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি নাকচ করে দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার।
আইএসবিরোধী যুদ্ধে কুর্দিদের ভূমিকা: ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে ইসলামিক স্টেট সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের তিনটি কুর্দি ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। ওই অঞ্চলে তাদের চালানো একের পর এক হামলা ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনীগুলো প্রতিরোধ করতে থাকে। ২০১৪ সালের জুনে উত্তর ইরাকে আইএস-এর আগ্রাসনের ফলে ইরাকের কুর্দিরাও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের সরকার এমন অঞ্চলে তাদের পেশমার্গা বাহিনী পাঠায় যেখানে ইরাকের সৈন্যদের অবস্থান ছিল না।
২০১৪ সালে আইএস আচমকা আগ্রাসন শুরু করলে বেশ কয়েকটি অঞ্চল থেকে পেশমার্গা বাহিনী সরে আসে। ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের বসবাস ছিল, এমন বেশ কয়েকটি অঞ্চলের পতন হয়- যার মধ্যে একটি হলো সিঞ্জার, যেখানে হাজার হাজার ইয়াজিদিকে আইএস আটক করে রাখে এবং হত্যা করে। ওই আগ্রাসন থামাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী উত্তর ইরাকে বিমান হামলা চালায় এবং পেশমার্গাদের সাহায্য করতে সামরিক উপদেষ্টা পাঠায়। তিন দশক ধরে তুরস্কে কুর্দি স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে লড়াই করা ওয়াইপিজি এবং পিকেকেও তাদের সহায়তায় যোগ দেয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কুর্দি শহর কোবানিতে হামলা চালায় আইএস। এই হামলার ফলে হাজার হাজার মানুষ তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এক যুদ্ধের পর কুর্দি বাহিনী কোবানের নিয়ন্ত্রণ পুনর্দখল করে। ওই যুদ্ধে অন্তত ১৬০০ মানুষ মারা যায়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী, সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস জোট এবং একাধিক আরব মিলিশিয়া বাহিনীকে কুর্দিরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করে সিরিয়া থেকে আইএস’কে সম্পূর্ণ বিতাড়িত করতে।
সর্বশেষ উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় একটি ৩২ কিলোমিটার ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করতে এবং ২০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীকে পুনর্বাসন করার জন্য তুরস্ক কুর্দিদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com