নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি, ৮ আগস্টের পর আমি পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলি, এই পুলিশ কমিশন গঠন তাদের সে সময়ের দাবি ছিল, তারা আর রাজনীতিকরণ এর অংশ হতে চায় না। এক “দানবিক পুলিশের” থেকে “মানবিক পুলিশ” গঠনের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন অপরিহার্য। এ ছাড়া আমার মতে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া পুলিশ কমিশনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।’
আজ শনিবার রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট হলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। ‘জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ কমিশন গঠন ও অন্যান্য সংস্কারের প্রস্তাব’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি)।
সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা সরাসরি অংশ নেন। সেমিনারের সঞ্চালনা করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম. হক।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম, পলিটিক্যাল সাইন্স অ্যান্ড সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা এ সেমিনারে দেশের পুলিশ সংস্কারের একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ এবং একটি সম্ভাব্য পুলিশ কমিশন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তারা দেশের কমিউনিটিতে পুলিশদের সরাসরি অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন, যাতে একটি সত্যিকারের জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা তৈরি করা যায়। পুলিশের ওপর এক প্রকার আস্থার অভাব এসআইপিজি’র সাম্প্রতিক গবেষণাতে উঠে এসেছে যে, মাত্র ১১ শতাংশ মানুষের পুলিশের ওপরে আস্থা আছে। এ প্রস্তাবে শিক্ষার্থীদের এই সংস্কার উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়, যা পুলিশিং ও কমিউনিটি সেবার মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপন করবে।
ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন থাকা জরুরি বলে মনে করি। তা অবশ্যই সরকার এবং পুলিশ এই দুই ক্ষেত্রের জন্যই ভালো হবে। পুলিশ এ কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে।’
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের ব্যাপারটিকে সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে আমরা বিকেন্দ্রীকরণের পথে এগিয়ে যাব এবং এর ফলে পুলিশের রাজনীতিকরণও কমবে।’ বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড. বাহারুল আলম বলেন, ‘আপনারা যে তিন ধাপের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তনের কথা বলেছেন, আমি মনে করি এটি পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে আমাদের পুলিশের মধ্যে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।’
সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস. এম. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের একজন কনস্টেবল যদি যোগ্য, মেধাবী এবং বিশ্বস্ত হন, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ কেন দেওয়া হবে না? আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। জনগণের জন্য যা ভালো, তা আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে স্বাগত জানাই।’
পুলিশের ডিআইজি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘মনোবল ভেঙে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি আমাদের সংস্কারের একটি অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্যানেলের শেষ বক্তা হিসেবে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. মাহবুবুল করিম বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের পথে যেতে পারি, তবে পুলিশ সংস্কারকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। সকল সংস্কার প্রচেষ্টাকে একই ধারায় বিবেচনা করা জরুরি, কারণ পুলিশ আমাদের সমাজের অংশ। আমাদের একটি জাতীয় শুদ্ধি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন।’
সেশনের সমাপনী বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, জনগণ সভ্যতা এবং দায়িত্বশীলতার চর্চা না করা পর্যন্ত কোনো জাতি প্রকৃত উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না। তাছাড়া পুলিশের সদস্যদের সর্বোচ্চ নৈতিক এবং নীতিগত মান বজায় রাখতে হবে। তারা অবশ্যই যাদের সেবা করছেন-এই দেশের নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা উচিত, বোঝা উচিত যে তাদের কাজ মূলত এই জাতির মানুষের সহায়তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা।’