যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। এ সময়ে প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস রোববার প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে একটিমাত্র রিপোর্ট ছেপেছে। তাতে এ পর্যন্ত যেসব মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের নাম, ঠিকানা ছাপা হয়েছে। অবশ্য সবার নয়। পত্রিকাটি মৃতদের যাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে, তাদের সবার নাম ঠিকানা দেয়া হয়েছে এতে। কোনো রাজনীতি, যুদ্ধ সংঘাত, যাপিত জীবনের অন্য কোনো রিপোর্ট না দিয়ে শুধু মৃতদের নাম, ঠিকানা প্রকাশের এমন ঘটনা বিরল। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে পত্রিকাটি বলেছে, তারা করোনা ভাইরাসের ব্যাপকতা এবং এই ট্রাজেডির নানা রূপ প্রকাশ করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য প্রথম পৃষ্ঠার ওই খবরের শিরোনাম ‘ইউএস ডেথস নিয়ার ১০০,০০০, অ্যান ইনক্যালকুলেবল লস’।
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি, গণনার অতীত ক্ষতি। এর উপশিরোনাম ‘দে অয়ার নট সিম্পলি নেমস অন এ লিস্ট। দে অয়ার আস’। অর্থাৎ এগুলো শুধু নামের তালিকা নয়। এ নামগুলো আমাদের। এই রিপোর্টে যে নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তা শুধু প্রথম পৃষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ধারাবাহিকভাবে তা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকাটির ভিতরের পৃষ্ঠাগুলোতেও। এতে রয়েছে প্রায় এক হাজার নাম, ঠিকানা। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত যত মানুষ মারা গেছেন করোনায় এই সংখ্যা ও তালিকা তার মধ্য থেকে সামান্য একটি অংশ।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির হিসাব মতে, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৭ হাজার মানুষ মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বে আর কোনো দেশে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যায় নি। মৃতের সংখ্যা এক লাখ স্পর্শ করলে তা কিভাবে উপস্থাপন করবে তাও বিবেচনা করছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। টাইমস ইনসাইডারের একটি প্রবন্ধে সহকারি গ্রাফিক্স এডিটর সিমোনে ল্যান্ডন ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে তারা এই মহামারির মৃতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং তা সাজিয়েছেন। একটি গবেষকদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ল্যান্ডন। এই দলটি যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক শত খবরের কাগজ ঘেঁটে সেখান থেকে মৃতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাদের তথ্য নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস শনিবার বিকেলে প্রথম পৃষ্ঠার একটি ছবি টুইট করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাতে রি-টুইট পড়ে ৬১,০০০ এবং লাইক পড়ে ১১ হাজার ৬০০।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মেমোরিয়াল ডে। আমেরিকায় গ্রীষ্ম শুরুর দিন এটি। এ সময়ে উষ্ণ আবহাওয়া ও লকডাউনে শিথিলতার কারণে দেশজুড়ে দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ আঘাত করতে পারে করোনা ভাইরাস- এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার হোয়াইট হাউজের করোনা ভাইরাস বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য ডা. অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, যদি গৃহীত পদক্ষেপ শিথিল করা হয় তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ আবার বিস্তার করবে অপরিহার্যভাবে। তিনি বলেছেন, যদি কন্টেইনমেন্ট বা কঠোরতা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ থামানো যেতে পারে।