উপকূলীয় সমুদ্র তীরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ জেলা বরগুনা। এ জেলার বয়ে চলেছে খরস্রোতা পায়রা ও বিষখালী নদী। যা জেলার বরগুনা, আমতলী, বামনা, তালতলী, বেতাগী ও পাথরঘাটা এ ছয়টি উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করেছে তিন ভাগে। এছাড়াও এ জেলা থেকে সুন্দরবনকে পৃথক করেছে বলেশ্বর নদী।
প্রায় প্রতিবছরই বরগুনায় আঘাত হানে কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড়। নড়বড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় সহস্র একর ফসলি জমি। জলোচ্ছ্বাসের স্রোতে ভেসে যায় শত শত মাছের ঘের। মুখ থুবড়ে পড়ে জেলার কৃষি ও মৎস্য খাত। নিঃস্ব হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। যুগ যুগ ধরে চলা প্রকৃতির এমন নিষ্ঠুরতার পরও জেলায় মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এ জেলার মানুষ।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সাড়ে ১১ ফিট উচ্চতার জোয়ারের তীব্রতায় জেলার ২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ভেঙে গেছে। পুরোপুরি ভেঙে গেছে প্রায় ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ। এতে জেলার ৬টি উপজেলার ৮২টি স্থানে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে যা মেরামত করতে ২০ কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যায় ধরেছে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রধান তিনটি খরস্রোতা নদী বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বরসহ বঙ্গোপসাগরের পানি থেকে সদর উপজেলাসহ ছয়টি উপজেলাকে নিরাপদ রাখতে মোট ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগেই ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ।
ঝুকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধের ১৫ থেকে ১৬টি স্থান পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে প্রায় অর্ধশত গ্রাম। পানিতে তলিয়ে গেছে সেসব এলাকার ঘরবাড়ি এবং মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে মুগডাল, চিনা বাদাম এবং ভুট্টার ক্ষেতসহ শত শত সবজির বাগান।
বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বিষখালী পাড়ের ডালভাঙ্গা এলাকাবাসী আবুল হাশেম (৬০) বলেন, ‘আমাগো ত্রাণ লাগবে না ভাই। যদি পারেন আমাগো এই বেড়িবাঁধটা যেন সরকার একটু ঠিক কইরা দেয়। দিন রাত পানিতে ভাসতে আর পারি না। ঘরবাড়ি সব তলিয়ে যায়। দিনে রাতে দুই বারের জোয়ারে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢলুয়া গ্রামের মতো বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা, বুড়িররচর, ছোট লবনগোলা, পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের গাববাড়িয়া, তাফালবাড়িয়া, কাঠালতলী ইউনিয়নের পরীঘাটা এবং পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা, জ্বিনতলা এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে আশেপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও বামনা উপজেলা রামনা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ, পূর্ব সফিপুর এবং বামনা লঞ্চঘাট, অযোদ্ধা, কলাছিয়াসহ তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইসার আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সাড়ে ১১ ফিট তীব্র জোয়ারের আঘাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ এবং তা মেরামতের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে জেলার ২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর প্রায় দুইশত মিটার বেড়িবাঁধ পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তিনি আরও বলেন, এসব নির্দেশনা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন।