খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছয় চিকিৎসককে বিনা নোটিশে বের করে দিয়েছে চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত হোটেল মিলেনিয়াম। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকান্দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হোটেলের বাইরে অপেক্ষার পরও ছয় চিকিৎসক সেখানে ঢুকতে পারেননি। জেলা প্রশাসনও চেষ্টা করে তাদের সেখানে রাখতে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে রাতে তাদের হোটেল অ্যাম্বাসেডরে নিয়ে যাই।’
ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকান্দার বলেন, ‘জেলা প্রশাসন বৈঠকের মাধ্যমে হোটেল মিলেনিয়ামে চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলেন। তারপর থেকে গত দুমাস চিকিৎসকরা এখানে কোয়ারেন্টিন পালন করে আসছেন। হঠাৎ সোমবার আমাদের জানানো হয় নেমে যেতে হবে।’
চিকিৎসকদের সঙ্গে এমন আচরণ করলে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে বলেও জানান হাসপাতালের পরিচালক।
জানা যায়, গত এপ্রিলে করোনা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য খুলনার চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয় জেলা প্রশাসনের। মৌখিকভাবে রাজি হয় তারা। সিএসএস আভা সেন্টার থেকে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা হাসপাতালে টানা ১০ দিন কাজ শেষে ১৪ দিনের জন্য হোটেল রয়েল, মিলেনিয়াম ও অ্যাম্বাসেডরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন পালন করেন। তবে সোমবার খুমেকের ছয় চিকিৎসককে ঢুকতে দেয়নি মিলেনিয়াম কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, এই মুহূর্তে হোটেলটি লকডাউন করা হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এ ব্যাপারে।
চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের রাখার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের কথা না থাকলেও মিলেনিয়াম তাদের থাকা বাবদ খুমেককে ২৩ লাখ টাকার বিল পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে হোটেল মিলেনিয়ামের মালিক সরফুজ্জামান টপি বলেন, ‘আমি সাত বছর আগে হোটেলটি একজনকে ভাড়া দিয়েছিলাম পরিচালনার জন্য। জানুয়ারি থেকে সেও আর হোটেলটি চালাতে চাচ্ছিল না। জেলা প্রসাশন থেকে হোটেলটি ব্যবহারের কথা বললে সে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু পুরো হোটেলে কোনো কর্মচারী নেই, শুধু দুজন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। এ অবস্থায় যদি সেখানে অবস্থান করা কারও কোনো সমস্যা হয়ে যায় তাহলে তার দায় কে নেবে?’
এদিকে, গত এপ্রিলে করোনা রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দেয় খুমেককে। পরবর্তী সময়ে সেখানে ১০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল করা হয়। যেটি খুমেক দ্বারা পরিচালিত। যার চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের।
মৌখিক ওই প্রস্তাবে আর্থিক লেনদেনের কোনো বিষয় না থাকলেও, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫৬ লাখ টাকার বিল পাঠিয়েছে ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুমেকের পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকান্দার।
এ ব্যাপারে খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর সবুজ বলেন, এই হাসপাতালে কর্মরত আট চিকিৎসকসহ ৪৫ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতাসহ প্রণোদনার টাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুমেকে কোনো বিল পাঠানো হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
এ নিয়ে খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।