যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শহর জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় গত ১৩ অক্টোবর রোববার স্থানীয় সময় দুপুর একটায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নতুন প্রজন্মের ছাত্র ছাত্রীদের অংশগ্রহণে এক ভিন্নমাত্রার মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গুইনেট কাউন্টির পুনা রেস্তোরাঁয় এই চমকপ্রদ অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল যৌথভাবে নর্থ আমেরিকান এলায়েন্স ফর সোশ্যাল রিলিফ (নাসর), ডিস্ট্রেসড চিলড্রেন ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল (ডিসিআই), জর্জিয়া শাখা, মুক্ত চিন্তা সুস্থ ধারার সংগঠন বাংলাধারা ও রহমান এডুকেশনাল ফান্ড।
জর্জিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এটিই ছিল প্রথম উদযোগ যেখানে শুধুমাত্র নতুন প্রজন্ম বা দ্বিতীয় প্রজন্মের সদস্যরাই অনুষ্ঠানের পুরো সময় জুড়ে মূলধারায় নিজেদের বেড়ে উঠার নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে। “মাই ড্রিমস- মাই চেলেঞ্জেস” শিরোনামের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ছেলে-মেয়েরা আমেরিকায় জন্মগ্রহণ সত্ত্বেও শ্বেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গ গোত্রের ছাত্রদের ভিড়ে খয়েরি গোত্রের নাগরিক হয়ে কিভাবে নানা প্রতিকূল বাঁধা কাটিয়ে মাথা উঁচু করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়, তাঁর সাবলীল বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। একদিকে মূলধারার চ্যালেঞ্জ, আমেরিকান হিসেবে এগিয়ে যাওয়া, আবার অন্যদিকে বাংলাদেশি পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজের শেকড়কে চেনার অধ্যবসায়- এই দুইয়ের টানাপোড়নে নতুন প্রজন্ম এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কিভাবে বেড়ে উঠছে, সেইসব নতুন নতুন তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা শুনতে শুনতে এক পর্যায়ে উপস্থিত অভিভাবকরাও নিজ নিজ সন্তানদেরকে নতুনভাবে জানার সুযোগ লাভ করেন।
ছেলে-মেয়েরা সঠিকভাবে বাঙালি কিংবা মুসলমান বা হিন্দু হয়ে বেড়ে উঠতে পারছে কিনা এটি নিয়েও অভিভাবকদের মধ্যে নানা উৎকণ্ঠার বিষয়টি সন্তানেরা বুঝতে পারার পর থেকে তাদের কাছে এই দুই সংস্কৃতির সমন্বয় করে পথ চলার ব্যাপারটিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসে দাঁড়ায় বলে কোন কোন বক্তা উল্লেখ করে। এরপরও বাংলাদেশি পরিবারের সন্তানেরা পড়ালেখায় তুলনামুলকভাবে আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের চাইতে অনেক গুণে ভালো ফলাফল করছে বলে কিশোর বক্তারা এই সাফল্যকে ধরে রাখার সংকল্পের কথাও উচ্চারণ করে ওই অনুষ্ঠানে।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে নির্ধারিত আলোচনা উপস্থাপন করে নাসর’এর প্রতিনিধি সাদমান ইবনে মাসুদ, ডিসিআই’এর পক্ষে রাজলিমা ভূঁইয়া, ফাতিন আহমেদ ও আহসান শমিক, বাংলাধারার পক্ষে মোহাম্মদ হাসান ও শউমিক শান্যাল এবং রহমান এডুকেশনাল ফান্ডের পক্ষ থেকে সুবর্ণ আনোয়ার ও ফাইজা কামাল। এরপর দ্বিতীয় পর্বে মুক্ত আলোচনায় অন্যান্য কিশোর-কিশোরীসহ অভিভাবকরাও অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের সবাই ছিল অস্টম গ্রেড থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রী। পুরো অনুষ্ঠানটি সাবলীল ভাষায় সঞ্চালন করেন অভিভাবকদের পক্ষ থেকে রিটা আলী। এর আগে আয়োজক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নাসর’এর সভাপতি ডঃ আওয়াল ডি খান, ডিসিআই’এর অন্যতম পরিচালক ফাহমিদা শারমিন, বাংলাধারার সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ও রহমান এডুকেশনাল ফান্ডের পরিচালক মীর মুজিবুর রহমান। তরুণ প্রজন্মের এই ভিন্নমাত্রার আয়োজনটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মীর মুজিবুর রহমান, মাসুদ রানা ও রুমী কবির।