বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে দেড় শতাধিক বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবেই শতাধিক। মিশনগুলোর রিপোর্টে বলা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিগুলোতে আরও অনেকে জীবন ঝুঁকিতে রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে গোটা দুনিয়ায় বাংলাদেশি আক্রান্তে সংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষ!
উদ্বেগের খবর হচ্ছে এই ক’দিনে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল শ্রমবাজারে টিকে থাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানো বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনা ঝেঁকে বসেছে। গত এক সপ্তাহে সৌদি আরবে ১০০ বাংলাদেশি মারা যাওয়া ছাড়াও আক্রান্ত বেড়েছে কয়েক হাজার। কমিউনিটির বরাতে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ মিশন ঢাকায় জানিয়েছে দেশটিতে করোনায় বাংলাদেশি মৃতের সংখ্যা ২২০ এ পৌঁছে গেছে।
গত ২৮ শে মে-তে এটি ছিল ১২০ এ। কুয়েতে গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশি মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ থেকে ৩৫ হয়েছে। আর বাহরাইনে গত সপ্তাহ অবধি কোনো বাংলাদেশি মারা যাওয়ার ঘটনাই ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক সপ্তাহে মারা গেছেন ৫ জন। তবে আশার দিক হচ্ছে যে নিউইয়র্ক রীতিমত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল, প্রতিদিন ৬-৭ শ লোক গড়ে মারা যেতো, সেই নিউইয়র্ক সিটি গত শুক্রবার ছিল মৃত্যু শূণ্য। ওই সিটিসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে কেবল কোভিড-১৯ এর ডেজিগনেটেড হাসপাতালেই আড়াই শতাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মারা গেছেন। বৃটেনের অবস্থা আরও শোচনীয় ছিল, ওল্ড হোম এবং কেয়ার হাউজ মিলে করোনাকালে নানা বয়সী তিন শতাধিক বাংলাদশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক দুনিয়া ছেড়েছেন। সমৃদ্ধ বৃটিশ বাংলাদশি কমিউনিটির রিপোর্ট মতে, ওই ৩ শতাধিক বাংলাদেশির এক তৃতীয়াংশের অন্য কমপ্লিকেশন্স ছিলো, রোগ-শোক বা জটিলতা ছিলো, কিন্ত তাদের প্রত্যেকেই করোনা বা এ সংক্রান্ত উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। স্বস্তির খবর হচ্ছে গত ৩ দিনে বৃটেনে কোনো বাংলাদেশি মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করতে হয়নি মিশনকে।
অন্যান্য দেশের চিত্র
সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ পর্যন্ত অর্ধশত বাংলাদেশি মারা গেছেন। কাতারে ৯ জন। ইতালিতে হাজার হাজার লোক করোনায় মারা গেছেন। সেই ভিড়ে ৯ জন বাংলাদেশিও প্রাণ হারিয়েছেন। ইউরোপের অপর দেশ সুইডেনে মারা গেছেন ৮ বাংলাদেশি। ফ্রান্সে ৫, স্পেনে ৫ এবং পর্তুগালে ১ জন বাংলাদেশির প্রাণ কেড়েছে করোনা। কানাডায় ৯ বাংলাদেশির মৃত্যু ছাড়াও মালদ্বীপ, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় একজন জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।
আক্রান্ত অর্ধলক্ষের এক তৃতীয়াংশের বেশি সিঙ্গাপুরে
এদিকে মিশনগুলোর রিপোর্ট এবং সেগুনবাগিচার করোনা সেলের হিসাব মতে, বিদেশে আক্রান্ত প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশির এক তৃতীয়াংশের বেশি সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে মোট বাংলাদেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে বলে বাংলাদেশ মিশন নিশ্চিত করেছে। এরপরেই সৌদি আরবের অবস্থান। দেশটিতে শ্রম কাউন্সিলরসহ প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত। অবশ্য জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট মানবজমিনকে জানিয়েছে- শ্রম কাউন্সেলর মো.আমিনুল ইসলাম এখন অনেকটাই সুস্থ।
ওদিকে করোনা সেলের তথ্য মতে, কাতারে গত এক সপ্তাহে ৬ হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদের তথ্য মতে, দেশটিতে এখন ব্যাপক টেস্ট হচ্ছে। গড়ে দেড় হাজার শনাক্ত হচ্ছেন প্রতিদিন। তবে রিকোভারি রেট এর প্রায় ৩ গুণ। সুস্থ হওয়ার তালিকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন। অনেকে অল্পতে সেরে উঠছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন হাজার, কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ৪ জন স্টাফসহ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার,
মালদ্বিপে ১০১৮, বাহরাইনে ৭০০, ইতালিতে ৩০০ এবং স্পেনে দেড় শতাধিক বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত। তবে উল্লেখিত দেশগুলোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও কানাডায় প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত করোনা আক্রান্ত মর্মে তথ্য পেয়েছে ঢাকা।
সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাতে মানবজমিনকে বলেন, সিঙ্গাপুরে মোট আক্রান্তের অর্ধেকই বাংলাদেশি। দেশটিতে ৩৭ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত। তবে খুব কম বাংলাদেশি একটিভ কেস রয়েছে। বেশির ভাগই সুস্থ। তবে আশার দিক কোনো মৃত্যু নেই। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, তাদের ৪ জন স্টাফের ৩ জন সুস্থ। তবে বয়স্ক একজন ট্রান্সলেটরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের পর থেকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তিনি। দূতাবাসে স্থানীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই বাংলাদেশি কর্মকর্তার সুস্থতায় মিশনের তরফে দেশবাসীর দোয়া চাওয়া হয়েছে।