কাশ্মিরকে এখনো বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হিসেবেই দেখে যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া ভারত কর্তৃক অধিকৃত ভূখ-গুলোর সংযোজন দখলীকৃত কাশ্মির সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটায়নি। গত মঙ্গলবার কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট কমিটির শুনানিতে এ তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী অ্যালিস জি ওয়েলস। ওয়েলস বলেন, সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখাকে আমরা (কাশ্মিরের দুটি অংশকে পৃথকীকরণ রেখা) একটি ডি ফ্যাক্টো লাইন হিসেবে বিবেচনা করি। নিয়ন্ত্রণ রেখার উভয় পাশের ডি-ফ্যাক্টো প্রশাসনকেই আমরা স্বীকৃতি দেই। শুনানির শুরুতে প্যানেলের চেয়ারম্যান ও কংগ্রেস সদস্য ব্র্যাড শেরম্যান ওয়েলসকে উদ্দেশ করে জানতে চান, ওয়াশিংটন যদি এখন নিয়ন্ত্রণ রেখাকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে দেখে থাকে তাহলে ৫ আগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে ভারতের মূল ভূখ-ের সাথে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তের ফলে অধিকৃত কাশ্মিরের বিষয়ে মার্কিন অবস্থানও প্রভাবিত হয়েছে কি না? তিনি আরো জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ওয়াশিংটন এখনো কাশ্মিরকে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে দেখছে কি না? এর উত্তরেই ওয়েলস কাশ্মির সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অবস্থান তুলে ধরেন। শেরম্যান যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মিরকে একীভূত করার ভারতীয় সিদ্ধান্তের সাথে একমত কি না? এর জবাবে ওয়েলস বলেন, আমরা ভারত বা পাকিস্তান কোনো অংশের প্রশাসনের পক্ষেই অবস্থান নিইনি। ওয়েলস তার লিখিত রিপোর্ট প্যানেলে উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের যুক্তি বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পেছনে রয়েছে ওই রাজ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ানো, দুর্নীতি কমানো এবং কেন্দ্রীয় আইন সমানভাবে প্রয়োগ করার আকাঙ্ক্ষা। আমরা এসব উদ্যোগ সমর্থন করি। কিন্তু কাশ্মির উপত্যকার পরিস্থিতি আমাদের দফতরকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
উপত্যকায় আটক রাজনৈতিক নেতাদের নিয়েও স্পষ্ট ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওয়েলস। তিনি বলেন, স্থানীয় এবং বিদেশী সাংবাদিকরা কাশ্মিরের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিরাপত্তার কড়াকড়ির জন্য অধিকাংশ জায়গায় তারা যেতেই পারেনি। প্রকৃত সংখ্যা না পেলেও আমাদের ধারণা গত দুই মাসে বিপুল সংখ্যক মানুষকে আটক করা হয়েছে। যদিও পরে অনেককে ছাড়া হয়েছে। কংগ্রেস কমিটির চেয়ারম্যান ব্র্যাড শেরম্যান থেকে শুরু করে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিনেটর প্রমীলা জয়পাল প্রত্যেকেই কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জয়পাল বলেন, সেখানে বিনা অভিযোগে প্রায় ১২ জন শিশুকে আটক করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। আরেক সিনেটর ইলহান ওমর বলেন, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপরও নির্ভরশীল। নরেন্দ্র মোদি সরকার ও বিজেপি এই মূল্যবোধকে সঙ্কটে ফেলছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সঙ্ঘাত কমাতে আলোচনা শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন ওয়েলস। সূত্র : ডন ও এনডিটিভি।