করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিন সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষ হয়েছে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে। তবে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। লকডাউন শেষ হওয়ার একদিনের মধ্যেই এলাকাটি ফিরে গেছে আগের রূপে। ভ্যান গাড়িতে মাছ-সবজি ও ফলমূল বিক্রেতাদের আনাগোনার পাশাপাশি লকডাউন শুরুর আগে এলাকাছাড়া বাসিন্দাদের অনেকেই ফিরে আসছেন। দেখা গেছে স্থানে স্থানে জটলা বেঁধে আড্ডারও।
অন্যদিকে আগামী শনিবার থেকে ২১ দিনের লকডাউন শুরু হবে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায়। ওয়ারী ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে আতঙ্কের ছিটেফোঁটাও নেই। রাস্তায় রাস্তায় যানজট, বিভিন্ন পোশাক ও প্রসাধনী দোকানগুলোয়ও ভিড় লক্ষণীয়। এলাকার অনেক বাসিন্দারা জানেন না, কবে থেকে কার্যকর হবে লকডাউন।
রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত ওয়ারী এলাকার ভেতরে-বাইরের আটটি রোডে লকডাউন শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার সকাল ছয়টা থেকে। এটি শেষ হবে ২৫ জুলাই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ওয়ারীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের এই ৮টি এলাকার মধ্যে বাইরের রোডগুলো হলো টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন এবং ভেতরের রোডগুলো হলো লারমিনি স্ট্রিট, হরী স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যানকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট।
ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এসব এলাকা ২১ দিন লকডাউন থাকবে। কেবল দুটি সড়ক হয়ে যাতায়াত থাকবে। বাকি সড়কগুলোর মুখ আমরা বন্ধ করে দেব। সেখানে একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নমুনা সংগ্রহ করার জন্য বুথ স্থাপন করা হবে।
ওয়ারীতে লকডাউন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নাগরিকদের সচেতন করতে সকাল থেকে ওয়ারীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। তবে লকডাউন বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হলেও স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। পুরান ঢাকার মধ্যে অপেক্ষাকৃত অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ওয়ারীতে রয়েছে দেশের প্রসিদ্ধ কাপড়ের দোকানসহ নানা প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান। এসব দোকানে গতকাল দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। রাস্তায় রাস্তায় যানজট। বিভিন্ন স্থানে চলছে জটলা বেঁধে আড্ডা।
ফুটপাতের দোকানি রবিউল আউয়াল বলেন, লকডাউনের খবর এখনো জানি না। দোকান বন্ধ থাকলে আমরা চলব কীভাবে? অন্য এলাকায় ব্যবসা করব শনিবার থেকে।
এদিকে সরেজমিনে পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ব্যবসায়ীর মুখেই মাস্ক নেই। শ্রমজীবী মানুষেরও একই অবস্থা। সুপারশপগুলোয় ভিড় ছিল লক্ষণীয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো আমাদের সময়কে বলেন, আমরা সকাল থেকেই সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছি। মহল্লায় মহল্লায় মাইকিং করা হচ্ছে। লিফলেটও বিতরণ করা হবে।
এদিকে পূর্ব রাজাবাজারে ২১ দিনের লকডাউন শেষে গতকালই প্রথম দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তেমন বেচা-বিক্রি না থাকলেও মোড়ে মোড়ে ছিল মানুষের জটলা। ভ্যানে করে নানা ধরনের সবজি বিক্রি করছেন দোকানিরা।
স্থানীয় একজন বাড়িওয়ালা রফিকুল আজম বলেন, আমরা করোনা সংক্রমণের ভয়ে ২১ দিন লকডাউন কাটিয়েছি। কিন্তু আবার আগের রূপেই ফিরে যাচ্ছে রাজাবাজার। লকডাউনের আগে যারা এলাকা ছেড়েছিলেন তারা সবাই ফিরে আসছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, দোকানে জটলাবেঁধে আড্ডাও দিচ্ছে। সাময়িকভাবে সংক্রমণ কমলেও কয়েকদিন পর আরও বাড়তে পারে।