করোনায় আলুপ্রধান চীন, ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানিকারকরা বাড়তি দাম চাওয়ায় বিশ্ববাজারে দেশ তিনটির আলুর চাহিদা কমেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। করোনা পরিস্থিতিতেও তারা গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি আলু মধ্যপ্রাচ্যসহ ১৩টি দেশে রপ্তানি করেছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে আলু নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকরা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, নভেল করোনা ভাইরাসজনিত কারণে রপ্তানি বাজারে চীনের রপ্তানি বন্ধ হওয়া, বিরূপ আবহাওয়ায় রপ্তানি বাজারে পাকিস্তানি আলুর সরবরাহ ঘাটতি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারতে আলুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বিশ্ববাজারে এখন আলু রপ্তানিতে বাংলাদেশের কোনো প্রতিযোগী নেই। বিদেশি নতুন নতুন ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে আলু ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ সুযোগটা কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
আলু রপ্তানিতে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে আলুর উৎপাদন বছরে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে এক কোটি টন ছাড়িয়েছে। আলুর বার্ষিক অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টনের মতো। সে হিসাবে দেশে প্রায় ৩০ লাখ টন আলু অতিরিক্ত থাকছে। রপ্তানি উপযোগী আলু উৎপাদনে উন্নতমানের বীজের ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ থেকে স্থায়ীভাবে বৃহৎ পরিসরে আলু রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানির তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ব্রুনাই, কুয়েত, ওমান, কাতার, হংকং, ভিয়েতনাম,বাহরাইন ও মালদ্বীপে রপ্তানি হয়েছে ৩১ হাজার ২৭৭ দশমিক ৫৯ টন আলু। আরও ৫শ টনের ওপরে আলু রপ্তানি করার জন্য অনুমতিপত্র চেয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ রপ্তানির ৮০ শতাংশই গেছে এককভাবে মালয়েশিয়ায়। বাকিটা সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ব্রুনাই ও কুয়েতসহ ১৩টি দেশে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩১ হাজার ৮৯ টন। হিসাব করলে দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতিতেও এবার আলুর রপ্তানি বেড়েছে। সেটার সুফল পাচ্ছেন চাষিরা।
দেশের প্রথম ও শীর্ষস্থানীয় আলু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এগ্রিকনসার্ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শেখ আবদুল কাদের বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশে এখন আলুর তৈরি খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রপ্তানি খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দেশের আলু রপ্তানির বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন ক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের অর্থসংকট রয়েছে। এ খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়ার পর তা স্বল্পসময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় থেকে আদায়যোগ্য করা সম্ভব।
দেশ থেকে খাদ্যপণ্য ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির জন্য ছাড়পত্র দিয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ থেকে মোট ৪ জাতের আলু রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে গোলাকৃতির ৫০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রামের আলু। রপ্তানির আইটেম হিসাবে এ ধরনের আলুকে বলা হয় ‘গানালা’। ডিম্বাকৃতির ৫০ গ্রাম থেকে বেশি ওজনের ডায়মন্ড আলু, ৮০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম ওজনের গোলাকৃতি মানিলা আলু এবং ৬০ গ্রামের বেশি ওজনের রেড পটেটো।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার আলু রপ্তানি বেশি হবে। বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকায় আর রপ্তানিকারকের সহযোগিতার কারণে আলুর রপ্তানি বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতি না হলে এবার রেকর্ডসংখ্যক টন আলু মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা যেত। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক কিছু পণ্যের ক্ষেত্র সীমিত করে রাখা হলেও রপ্তানি কার্যক্রম সব সময়ই পুরোপুরি সচল রাখা হয়েছে। এতে অগ্রাধিকারও সর্বোচ্চ।