বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগের এক মাইলফলক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩৬৪ বার

ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়ে ১৬ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
আলোচিত এই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, নারীর মর্যাদা রক্ষায় নুসরাতের আত্মত্যাগ তাকে এরই মধ্যে অমরত্ব দিয়েছে। এই অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। পাশাপাশি আসামিদের ঔদ্ধত্য যুগে যুগে মানবতাকে লজ্জিত করবে। তাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই আসামিদের প্রাপ্য।
যেখানে চার দিকে খুনি-ধর্ষকদের অভয়ারণ্য বিরাজ করছে, প্রভাবশালী খুনি-ধর্ষকদের বিচার হচ্ছে না, সেখানে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেশের বিচার বিভাগের জন্য এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ রায় এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড রোধে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। রায়টি দু’টি কারণে প্রশংসার দাবি রাখে। প্রথমত, আদালত দ্রুততম সময়ে এই রায়টি প্রকাশ করতে পেরেছেন এবং দ্বিতীয়ত, প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
নুসরাত হত্যাকাণ্ডটি ছিল খুবই নৃশংস। এ নৃশংসতার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এটাই ছিল দেশবাসীর প্রত্যাশা। সামগ্রিকভাবে দেশবাসী এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। দেশবাসীর সাথে আমাদেরও প্রত্যাশা, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক রায় দেয়া অব্যাহত থাকলে এ দেশে খুনখারাবি ও নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের প্রকোপ কমে যাবে। সেই সাথে আশা করব উচ্চ আদালতেও এ ধরনের দ্রুত মামলার রায়দানের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে নুসরাত হত্যার রায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হয়। নুসরাত হত্যাকাণ্ডকে বর্বর বলে অভিহিত করেছে আলজাজিরা। এ রায় নিয়ে বাংলাদেশীদের প্রতিক্রিয়াও তুলে ধরা হয়েছে। বিবিসি বলেছে, এ রায় বিচার বিভাগের জন্য দ্রুত বিচারের একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। একটি হত্যাকাণ্ডের জন্য এত বেশি সংখ্যক আসামির ফাঁসির আদেশের কারণে বিদেশী গণমাধ্যমে এ রায়ের সংবাদটি গুরুত্ব পায়।
এই রায়ের আরেকটি দিক হলোÑ রায় পড়ার শুরুতে বিচারক নুসরাত হত্যার ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে তিরস্কার করেন। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর না ঘটে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন। পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে আদালত বলেন, গণমাধ্যমের কারণেই এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশবাসী জানতে পারে। এ কথা ঠিক, এই ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের লজ্জাজনক ভূমিকা সম্পর্কে দেশবাসীসহ আমরা জেনেছি। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, তাকে শুধু তিরস্কার করাই যথেষ্ট নয়। কারণ গ্রামগঞ্জে নানা ধরনের অপরাধ চলে, আর সে অপরাধীরা এসব কর্মকাণ্ড চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায়। এদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে আমরা নুসরাত হত্যার মামলার রায়কে স্বাগত জানাই। এ ধরনের রায় সাধারণ মানুষের আদালতের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।
অতি সম্প্রতি বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডও দেশ-বিদেশে আলোচিত এক হত্যাকাণ্ড। দেশবাসী প্রত্যাশা করছে, এ হত্যাকাণ্ডের মামলাও নুসরাত হত্যার রায়ের মতো দ্রুত প্রকাশ পাবে এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com