শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

ভোক্তাঋণ নিয়ে বিপাকে ব্যাংক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০
  • ২৪৯ বার

জামানতবিহীন ঋণে বিপাকে পড়ে গেছেন ব্যাংকাররা। ৫৭ হাজার কোটি টাকার এ ভোক্তাঋণ আদায়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। করোনার কারণে অনেকের ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অনেকেই। এতে বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের পথ। অনেকের বেতনভাতা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি আছে বেতন নেই। এমনি পরিস্থিতিতে সংসারের অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে উচ্চ সুদে ঋণ নেয়া এ ভোক্তাঋণের কিস্তি অনেকেই পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে বিপাকে পড়ে গেছেন ব্যাংকার ও সাধারণ ঋণগ্রহীতারা।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ঋণখেলাপি করা যাবে না। এ কারণে সেপ্টেম্বরের পরে বোঝা যাবে এ খাতের প্রকৃত অবস্থা। তবে, তিনি বলেন, সাধারণত এক সাথে বেশি পরিমাণ কিস্তি বকেয়া পড়লে সাধারণ গ্রাহকদের পরিশোধে অসুবিধা হবে। এ কারণে আমরা করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনে কিস্তির মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করব। কারণ, করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। কারো কারো আয়ের পথই বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে এসব জামানতবিহীন ঋণ আদায় করতে বিকল্প পথ ছাড়া সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো শিল্পঋণের পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য ভোক্তাঋণও বিতরণ করে থাকে। প্রধানত চারটি খাতে ভোক্তাঋণ দেয়া হয়। ক্রেডিট কার্ড, ভোক্তাপর্যায়ে অটো কার, ফ্ল্যাট বা বাড়ি করার ঋণ ও ব্যক্তিপর্যায়ের ঋণ। এর মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিপর্যায়ের ঋণ শতভাগই জামানতবিহীন। চালু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতনভাতার বিপরীতে এসব ঋণ দেয়া হয়।

ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সূচক নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, ব্যাংকিং খাতে ভোক্তাঋণের পরিমাণ গত ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরে ছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ভোক্তাঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যক্তিপর্যায়ে ঋণ গত এক বছরে ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডে ৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আবাসন খাতের ঋণ ১৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। তবে গত এক বছরে কমেছে অটোকার ঋণ। আটোকার ঋণ আগের বছরে যেখানে ছিল ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, গেল বছরে তা কমে নেমেছে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। শতকরায় সবচেয়ে বেশি ভোক্তাঋণ বেড়েছে ব্যক্তিপর্যায়ে ৩২ শতাংশ। আর ক্রেডিট কার্ডে বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আবাসন খাতে দেড় শতাংশের কিছু বেশি বাড়লেও অটোকার খাতে কমেছে ২ শতাংশের বেশি।

জানা গেছে, ভোক্তাপর্যায়ের সব ঋণই প্রায় জামানতবিহীন। এ জন্য এ ঋণের সুদহার বেশি। যেমন, ক্রেডিট কার্ডের সুদ ২৫ শতাংশের নিচে নেই। ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। অন্য ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রেও সুদ ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। যেখানে শিল্পঋণের সুদহার ৯ শতাংশ রয়েছে। আর এ ভোক্তাঋণের বেশির ভাগ গ্রাহকই অতি সাধারণ শ্রেণীর। ব্যাংকগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য মুনাফা আসে এ অপ্রচলিত খাত থেকে। প্রতিটি ব্যাংকেরই এ খাতের ঋণ আদায়ের জন্য আলাদা একটি শক্তিশালী টিম রয়েছে। এ খাতের কেউ কিস্তি পরিশোধে বিলম্বিত হলে গ্রাহককে ফোন, চিঠি দিয়ে ও নানা উপায়ে পেরেশানি করে তোলেন ব্যাংকাররা। এ কারণে ভোক্তাঋণের খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের অন্য যেকোনো ঋণের চেয়ে কম। যেমন, গত বছরের ৫৭ হাজার কোটি টাকার ভোক্তাঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ মাত্র ২ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। যা শতকরা হিসেবে পৌনে চার ভাগ। তাও আবার সমস্যাকবলিত আবাসন খাতেই ১ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ভোক্তাঋণ আদায়ে ভাটা পড়ে যায়। প্রায় চার মাস হতে চলল এ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের বেশির ভাগেরই আয় কমে গেছে। কারও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। কারও অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনো গ্রাহক চাকরি হারিয়েছেন। যাদের চাকরি আছে তাদের বেশির ভাগেরই বেতনভাতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কারো আবার চাকরি আছে বেতন নেই। এসব কারণে গ্রাহকের আয় কমে যাওয়ায় ভোক্তাঋণের আদায়ে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ রাজধানীতে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। কেউবা চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কারো আবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলেই ভোক্তাঋণের গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না। এমনি পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে গেছেন ব্যাংকার ও গ্রাহক। আয় না থাকায় ব্যাংকের ঋণ যেমন পরিশোধ করতে পারছেন না গ্রাহক, অপর দিকে ব্যাংকেরও অন্যতম আয়ের খাত বন্ধ হয়ে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। সবমিলে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় পাচ্ছেন না অনেকেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com