যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেটে বড় ধরনের সমাবেশ করতে চাইলেও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তার অনুমতি পাননি বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল রোববার প্রচারিত ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মিশিগান সরকারকে বলেছিলাম, আমি সেখানে বড় সমাবেশ করতে চাই। আপনারা কী জানেন যে আমাকে সেখানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি? আপনারা কী জানেন যে মিনেসোটায় আমাকে র্যালি করতে দেওয়া হয়নি? আমরা নেভাদায়ও র্যালি করার অনুমতি পাইনি। এসব ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত রাজ্যে আমরা সমাবেশ করতে পারছি না।’
এ সময় ডেমোক্র্যাটরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্কুল এবং রাজ্য বন্ধ করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কর্মকর্তারা সতর্কতা বজায় রেখেইে সমাবেশের অনুমতি দিতে পারতো।’
এ ব্যাপারে মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার বলেছেন, করোনাভাইরাসের চিত্র পরিবর্তনের কারণে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সাত সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রোববার রাজ্যে ৪৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে দুজন। করোনাভাইরাসে এদিন পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৬৬৩ জন আক্রান্ত এবং ৬ হাজার ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে ফেসবুকে এক সমাবেশে সমর্থকদের ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে সমাবেশ আয়োজন করার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে পৌঁছতে এবং সমাবেশটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে চাই এবং আমরা তা করবো। কোভিড-১৯ এবং গভর্নরের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই। যদিও এটি সত্যিই এটি খুব কঠিন হবে, তবে আমরা অবশেষে সেখানে উপস্থিত হবো।’
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে জুনে ডেমোক্র্যাটপন্থী হুইটমার বলেছিলেন, তিনি মহামারি চলাকালীন মিশিগানে জনসভা করতে ট্রাম্পকে থামানোর চেষ্টা করার বিষয়ে ‘খুব গুরুত্বের সঙ্গে ভাববেন’। এই রাজ্যে বর্তমানে ভাইরাসটির বিস্তার রোধে জনসমাগমের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী মানতে প্রতিবাদ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে।
রোববার ‘মিট দ্য প্রেস’ -এর একটি সাক্ষাৎকারে রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. জোনেইগ খালদুন বলেন, মানুষের বড় বড় জমায়েত নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তারা মাস্ক পরাটাকেও রাজনৈতিক করে ফেলেছেন। এটা যেন একটা সাধারণ জিনিস।
খালদুন বলেন, ‘আমি খুব উদ্বিগ্ন। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী যে মিশিগানবাসীরা সঠিক কাজটি করতে পারেন। কারণ আমরা এর আগে এটি করেছি। আমরা মার্চ এবং এপ্রিল মাসে মিশিগানে একদিনে দেড় শতাধিক মৃত্যু দেখেছি। আমরা এই বক্ররেখাটি নামিয়ে এনেছি। তাই আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা এটি করতে পারি আবার।’
এই মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্টের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নভেম্বরের নির্বাচনের আগে কোভিড -১৯-এর অজুহাতে তার বাবাকে গভর্নর হুইটমার সমাবেশ করতে বাধা দিলে তিনি অবাক হবেন না। ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, ‘অবশ্যই তিনি করোনার ছদ্মবেশে যা কিছু করতে পারেন তা আমাকে কিছুটা ধাক্কা দেবে। কারণ আবারও আপনি এটি নিরাপদে করতে পারতেন মাস্ক পরার বিধান দিয়ে এবং সামাজিক দূরত্ব মানার আদেশ দিয়ে আপনি এটা করতে পারতেন। এখনো আপনি বাস্তবে সেটা করতে পারেন।’
ট্রাম্প জুনিয়রের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হুইটমারের মুখপাত্র জ্যাক পোহল বলেছেন, গভর্নর মিশিগানবাসীর জীবন বাঁচাতে মনোনিবেশ করেছেন এবং পক্ষপাতমূলক খেলা এবং রাজনৈতিক আক্রমণে উদ্বিগ্ন তিনি।
পোহল বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যদি মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হতেন তাহলে এত বড় বিপজ্জনক সমাবেশ করতে পারতেন না। কারণ এতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা হতে পারতো মাস্ক পরার জন্য জাতীয় প্রচারণা। কারণ ইতোমধ্যে আমেরিকার হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই করোনাভাইরাসে।
২০১৬ সালে ট্রাম্প মিশিগানে ১০ হাজার ৭৯৪ ভোটে জিতেছিলেন। ১৯৮৮ সালের পর এই প্রথম রিপাবলিকান কোনো প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন জনপ্রিয়তায় বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। জুনে ট্রাম্প টুসলায় সমাবেশ করেছিলেন। তুসলা সিটির কাউন্টির স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ড. ব্রুস ডার্ট বলেন, এর মাধ্যমে তিনি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটিয়েছেন।