না ফেরার দেশে চলে গেলেন প্রবাসের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী অনুপ কুমার দাস (৫৬)। চলতি মাসেই অর্থাৎ আগামী ৩১ জুলাই তার বয়স ৫৭ বছর পূর্ণ হতো। সোমবার (২০ জুলাই) সকালে তার ফ্ল্যাটে তাকে মৃত পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে কিডনী সমস্যায় ভুগছিলেন। তার দুটো কিডনি নষ্ট ছিল। ময়নাতদন্তের পর তার প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। মৃত্যুকালে তিনি বাবা অমূল্য দাস, মা সুপ্রিয়া দাস, দুই ভাই আর এক বোন সহ বহু শুভাকাঙ্খী রেখে যান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটি বিশেষ করে সংস্কৃতি মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, অনুপ কুমার দাস কমিউনিটির পরিচিত মুখ শিতাংশু গুহ’র শ্যালক।
জানা গেছে, অনুপ কুমার দাস নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার শায়ারের একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। ছিলেন চিরকুমার। তার অসুস্থ বাবা-মা দীর্ঘদিন ধরে নার্সিংহোমে। তাদের নিয়মিত দেখতে যেতেন অনুপ কুমার। তিনি বাপা’র প্রতিষ্ঠাদের অন্যতম এবং সংগঠনটির নৃত্য শিক্ষক ছিলেন। তার মৃতদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী কুইন্সের করোনার একটি ফিউনেরাল হোমে তার শেষকৃত্যু অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। খবর ইউএনএ’র।
বাফা সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন জানান, ‘বিগত নয় বছর ধরে উনি আর আমি এক সঙ্গে বাফায় কাজ করছি। তিনি আমার পরিবারের সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছে তার মৃত্যুতে যেন নিজের ভাইকে হারালাম। তিনি জানান, অনুপ দাদা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত মঙ্গলবার (২১ জুলাই) হাসপাতালে অনুপ কুমারের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। নিজেই বাসায় ডায়ালাইসিস করতেন। ব্রুস নামে তার এক বন্ধু অনুপের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকলে ব্রুস-ই এসে তাকে নিয়ে যেতেন। ব্রুসের কাছে অনুপের বাসার চাবি ছিল। ব্রুস জানান, সোমবার দিন (২০ জুলাই) বন্ধুকে দেখতে বেলা দুইটার দিকে অনুপকে গিয়ে ঘরে তাকে মৃত পড়ে থাকতে দেখেন। অনুপের মোবাইলের কললিস্ট দেখে ব্রুস আমাকে ফোন জানান।’
নিউইয়র্কের কমিউনিটি নেতা শিতাংশু গুহ মিডিয়াকে জানান, অনুপ কুমার দাস সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই জুমে ছাত্রীদের ক্লাস নিয়েছেন। আগের দিন ১৭ জুলাই ফোনে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। ১৯ জুলাই কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট। প্রতিদিন রাতে নিজের ডায়ালাইসিস নিজেই করতেন। ধারনা করা হচ্ছে যে, ১৯ জুলাই গভীর রাতে ডায়ালাইসিস করার সময় সম্ভবত তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সোমবার (২০ জুলাই) দুপুরে তাকে ম্যানহাটনের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, ‘প্রায় ১০ ঘণ্টা আগে’ তার মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সন্তান ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স শেষ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য দিল্লীতে স্কলারশিপ পান। পরবর্তীতে তিনি মাস্টার্স শেষ না করেই চলে যান ভারতে। শান্তিনিকেতনে প্রথম এক বছরে কথাকলি ও মণিপুরী শিক্ষার পর ‘নাট্যম ও কত্থক নৃত্য’ শিখতে দিল্লি চলে যান। সেখানে শ্রীরাম ভারতীয় কলা কেন্দ্রে লীলা স্যামসনের কাছে ভরত নাট্যম ও মুন্নালাল শুক্লার কাছে কত্থক শেখেন অনুপ কুমার।
অনুপ কুমার দাসের মৃত্যুর খবর জানার পর, নিউইয়র্কের পিএস-২০০ স্কুলের শিক্ষক অ্যানি কাপুয়া ২০ জুলাই ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘আমি ওনার সঙ্গে স্কুলে কাজ করেছি। ওনার মতো চমৎকার মানুষ খুব কম দেখেছি। ছাত্র-ছাত্রীদের এত দরদ দিয়ে নাচ শেখাতেন যে, বলার নয়। ভারতীয় নাচ ও কোরিওগ্রাফি নিয়ে বহুবার কথা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। উনি নিউইয়র্ক বাঙালী কমিউনিটি নিয়ে খুব গর্বিত ছিলেন। খুব গর্ব ও ভালোবাসা নিয়ে তিনি সবার কথা বলতেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমাদের স্কুলের প্রত্যেকে তার মৃত্যুতে শোকাহত। তার খুব সুন্দর একটা মন ছিল।’