সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

পথের ভুলে পার হলো ১২ বছর : স্বামী সন্তানের কাছে ফিরতে চান মনোয়ারা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯
  • ২৮১ বার

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কখন যে কাকে কোথায় নিয়ে যায়, তা কেউ বলতে পারে না। তবুও জীবন চলে যায় বহমান নদীর মত। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতেই মানুষ কোনো না কোনো গন্তব্যে পৌঁছে যায়। আর এই গন্তব্য কারো জন্য হয় সুখের, আবার কারো জন্য দুঃখের। এমনই এক দুঃখিনীর নাম মনোয়ারা বেগম। যে কোনো সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে বৃদ্ধ মনোয়ারা বেগমের বাস্তব জীবনের গল্প! মনোয়ারা হারিয়ে ফেলেছেন তার আপন আত্মীয় স্বজনদের। এখন তার স্বামী সন্তানের কাছে ফিরতে চান তিনি।

জানা যায়, ২০১৫ সালে নিজের অজান্তে পথ ভুলে ভাণ্ডারিয়া-মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝামঝি মুসুল্লি বাড়ি নামকস্থানে ঘোরাঘুরি করছিলেন মনোয়ারা বেগম। তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন ভাণ্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা হারুন সরদারের স্ত্রী খাদিজা বেগম। অসহায় এই নারীকে নিজের কাছে নিয়ে আশ্রয় দেন তিনি। আশ্রয়দাতা খাদিজা বেগম পেশায় একজন মহিলা কবিরাজ (চিকিৎসক) হিসেবে পরিচিত।

কবিরাজ খাদিজা বেগম জানান, তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছে শুনতে পান প্রায় একযুগ যাবত মনোয়ারা এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেছেন। নিজের অজান্তেই চলে আসেন ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

তিনি আরো জানান, আশ্রিত মনোয়রা খালা খুব শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ। তার কাছে পরিচায় জানতে চাইলে তিনি তখন তেমন কিছুই বলতে পারেননি। আমি বুঝতে পারি তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। এরপর কবিরাজি বিদ্যা দিয়ে তার চিকিৎসা করি। আমার ভালো লাগছে যে, সে এখন অনেক কিছু মনে করতে পারছেন। তবে আমার আরো বেশী ভালো লাগবে সংবাদেরমাধ্যমে খালাকে আপন ঠিকানায় (পরিবারের কাছে) পৌছে দিতে পারলে। গত ৪/৫ বছরের চেষ্টায় এখন খালা প্রায় সুস্থ। তবে তিনি এখনও তার বাড়ির ঠিকানা বলতে পারছেন না।

এ প্রতিবেদককে ভাণ্ডারিয়া উপজেলার জুনিয়া এলাকায় দেখে ছুটে আসেন আশ্রয়দাতা খাদিজা। এ সময় স্মৃতিহীন মনোয়ারা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ফুলতলা তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাবার পথে তিনি হারিয়ে যান। তার স্বামী মান্নান ড্রাইভার (গাড়িতে মালামাল টানে), বাবার নাম ইয়াদ আলী, ভাই দারোব আলী, শ্বশুর আব্দুল রশীদ মুন্সি। তিনি তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জননী। ছেলেদের নাম আশকার ও সেলিম। মেয়ে ভানু, ছালমা ও শিল্পী।

মনোয়ারা আরো জানান, তার বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি একই এলাকায়। তার এলাকার ইউপি মেম্বারের নাম সিমান। তিনি আরো বলেন, তার বাড়ির সামনে জামতলার হাট নামক একটি বাজার আছে। এলাকার পরিচিত লোক হিসেবে চিনেন কোবার অথবা কবির নামের এক ডাক্তারকে। তিনি এখন ফিরতে চান তার আপন গ্রামে; তার পরিবারের কাছে। কাছে পেতে চান তার স্বামী-সন্তানকে। কিন্তু তিনি জানেন না তার স্বামী-ছেলে মেয়েরা কে কোথায় আছে।

মনোয়ারা বেগম আরো জানিয়েছেন, তার ছেলে-মেয়ের কথা মনে পড়ে। বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে। মনে পড়লে কষ্ট হয়, কান্না করেন। চিকিৎসায় সে এখন অনেকটাই সুস্থ। অচেনা এ এলাকায় আর এক মুহূর্ত থাকতে চান না তিনি।

এই প্রতিবেদক মনোয়ারার দেয়া তথ্য ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, জামতলার হাট ও সিমান নামে ওই মেম্বরের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নে। বোনের বাড়ি ফুলতলা নামক স্থানে বেড়াতে গিয়ে হারিয়েছে , সেটা রাজবাড়ী সদর থানার খানখানাপুর ইউনিয়নের একটি স্থান বলে জানা যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com