প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে আমেরিকা। এই ভাইরাসের প্রকোপে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই রাষ্ট্র। মাঝে কিছুটা সংক্রমণ কমলেও বর্তমানে তা আবারও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ২,৬০০ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বিশ্বের যেকোনও দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। খবর রয়টার্স ও সিডনি মর্নিংয়ের।
আমেরিকায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছতে সময় লেগেছিল ৯৮ দিন। ১০ লাখ থেকে ২০ লাখে পৌঁছতে সময় লাগে ৪৩ দিন। আবার ৩০ লক্ষের গণ্ডি পেরোতে সময় লেগেছে মাত্র ২৭ দিন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে কী গতিতে রোজ কোভিড পজিটিভ কেস বেড়েছে, তার জন্য এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট।
২৪ জুলাই (শুক্রবার) ভোর পর্যন্ত আমেরিকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ হাজার ৪৮৮ জনের পজিটিভ কেস ধরা পড়ে। তার আগের দিন আক্রান্তের এই সংখ্যাটা ছিল ৭১ হাজার ৯৬৭। অর্থাত্ নিয়মিত ৬০ হাজারের ওপর মার্কিনি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
মার্কিনমুলুকে এখনও কিন্তু করোনায় মৃত্যু দৈনিক হাজারের নীচে নামেনি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে ১ হাজার ৬৪ জন কোভিডে মারা গেছে। আগের দিন এই সংখ্যাটা ছিল ১ হাজার ২০৫। সব মিলিয়ে ট্রাম্পের দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৪৭ জনের। প্রাণঘাতী ভাইরাসের মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছেন ১৯ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ জন। অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৪০ হাজার ৭১৬। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থা ১৯ হাজার ২২৬ জনের।
কোভিড টেস্টেও বিশ্বের বাকি দেশকে বহু পিছনে ফেলে আমেরিকাই শীর্ষে রয়েছে। ৫১ কোটি ৫৫ লাখ ১ হাজার ৫৫৮ পরীক্ষা হয়ে গেছে। এর পরেই রয়েছে রাশিয়া, ২৬ কোটির ওপর টেস্ট হয়েছে। ভারতে ১৫ কোটি ৭৫ হাজার ৩৬৯ নমুনার টেস্ট হয়েছে। প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় হিসাব করলে, আমেরিকায় টেস্ট হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৯ জনের।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিড়ম্বনায় ফেলে সে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ টোডাস ফিলিপসন সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে দাবি করেন, ফ্লুয়ের মতো সংক্রমণ যে মহামারী আকার নেবে, সেই বিপদ সম্পর্কে হোয়াইট হাউজকে তার টিম অনেক আগেই সতর্ক করেছিল। কোভিড-১৯ আঘাত হানার তিন মাস আগে তারা সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু, ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই রিপোর্ট গুরুত্ব দিতে চাননি। যার জেরে আজ এই ভয়ঙ্কর দিন দেখতে হচ্ছে আমেরিকাকে। টোডাস ফিলিপসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় এক অর্থনীতিবিদ, যিনি হোয়াইট হাউজের সঙ্গে কাজও করেছেন। গত জুনে তিনি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শিক্ষকতার পেশায় ফিরে গিয়েছেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। পদত্যাগের পর তিনি নিজেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। তবে এখন সুস্থ।