যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। যে কারণে বড় বড় দাগী আসামিরা ভোগ করেন যাবজ্জীবন সাজা। কিছু কিছু সময় কঠিন অপরাধের সাজা থেকেও মুক্তি পেয়ে যায় আসামিরা। তখন সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২৫ বছরের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাদের। বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস ডেভো হাসপিলও (২১) হয়তো এমন সুযোগ পেতে পারেন।
নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। সাজা কমে যাওয়ার পেছরে কারণ দেখানো হয়েছে, হ্যাসপিলের মানসিক অবস্থার বিবেচনাকে। আরও বলা হয়েছে, ছোটবেলা থেকে নানা সমস্যার মধ্যে কাটাতে হয়েছে ফাহিমের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীকে। তার মায়েরও মানসিক সমস্যা ছিল। যে কারণে হাসপিল ছোট থাকার সময়ই তাকে পাগলা গারদে থাকতে হয়েছে। এ সময় ছোট হাসপিলকে আত্মীয়দের বাড়ি এবং আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করে কাটাতে হয়েছে।
নিউইয়র্ক ডেইলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন মারজোরি সাইন নামে এক নারী। যিনি নিজেকে হ্যাসপিলের আন্টি বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জানান, হ্যাসপিলের মা পাগলা গারদে থাকা অবস্থায় তাকে ভ্যালি স্ট্রিম এলাকায় নানির কাছে রাখা হয়। ১২ বছর বয়সে তিনিও মারা যান। পরে হ্যাসপিলের আশ্রয় হয় মারজোরির কাছে।
মারজোরি সাইন বলেন, হ্যাসপিল দিনে দিনে অবাধ্য হয়ে উঠছিল। ১৭ বছর বয়সে তাকে একটি ফোস্টার (পালিত) কেয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দিই। যে কারণে আমাকে আদালতেও যেতে হয়েছিল। আমি তাকে লালন-পালন করতে পারব না বলে জানাই আদালতকে। তখনই আমার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়।
এর পরের বছর হ্যাসপিলের বাবাও মারা যান। পরে তিনি ব্রুকলিনের প্রস্পেক্ট পার্ক এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।
আপাতত হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ডিগ্রি হত্যা মামলায় নেওয়া হয়েছে। তবে যদি প্রমাণ হয়, মায়ের মতো তিনিও মানসিক কোনো সমস্যায় থেকে থাকেন; তাহলে তার বিরুদ্ধে ‘ডিফেন্সেস টু সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার চার্জ’ আইন অনুযায়ী ‘মেন্টাল ডিজিজ অর ডিফেক্ট’ ফেলোনিতে মামলা পাল্টে যাবে। এতে করে তিনি ১৫ থেকে ২৫ বছরের সাজা পেতে পারেন।
ফাহিম সালেহ’র প্রতিষ্ঠিত অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটেলে কাজ করতেন হ্যাসপিল। সেখানে চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন টাইরেস। অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটেল’র সবকিছু দেখভালের সুযোগ নিয়ে টাইরেস প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রায় ১ লাখ ডলার সরিয়ে ফেলে, যেটি পরে বুঝতে পারেন ফাহিম। তবে ব্যাপারটি পুলিশকে না জানিয়ে তাকে সুযোগ দেন সেটি ফিরিয়ে দিতে। আর ওই সময় থেকেই ফাহিম সালেহ’কে হত্যার পরিকল্পনা করেন টাইরেস ডেভন হ্যাসপিল।
সোমবার ফাহিম সালেহ’র সঙ্গে তার অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে প্রথমেই তাকে অচেতন করে মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাত করে টাইরেস। পরদিন আবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের সমস্ত আলামত মুছে ফেলতে ফাহিম সালেহ’র শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে তা ব্যাগে ভরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ সেই ফ্ল্যাটে এসে পড়ায় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না করেই পালিয়ে যান হত্যাকারী।
সার্ভিলেন্স ভিডিওতে দেখা গেছে, সালেহ’র সঙ্গে তারই সাবেক এই কর্মী নিজেকে আড়াল করে লিফটে ওঠে। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকারীর গত কয়েকদিনের কেনাকাটার রেকর্ড যাচাই করে তারা দেখেছে সে একটি ইলেক্ট্রিক করাতও কিনেছিল কিছুদিন আগে।