ব্যাংক লেনদেনে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি, তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যাদের নাম পত্রপত্রিকায় উঠে আসছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকছেন ব্যাংকাররা।
লিখিত কোনো নির্দেশনা না থাকলেও মৌখিক নিদের্শনার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচিত ব্যক্তিদের ব্যাংক লেনদেন বিশেষ করে অর্থ উত্তোলন ও এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
একই সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার চাহিদা মোতাবেক তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন যাতে করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
একটি সরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো এখন বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যস্ত রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার চাহিদা মোতাবেক গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সাথে এসব গ্রাহকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা যাতে অর্থ উত্তোলন করে নিয়ে যেতে না পারেন বা অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে না পারেন সেজন্য কর্মকর্তাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কেননা অনিয়মের সাথে জড়িত কোনো গ্রাহক তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করে নিয়ে গেলে এর দায়-দায়িত্ব ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপরও বর্তাবে। এ কারণেই কোনো বড় অংকের ব্যাংক চেক বা পে-অর্ডার এলে তা নগদায়নের আগে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কি না- তা মিলিয়ে দেখছেন ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ‘ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা অন্যায়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটা পোস্ট অফিসের দায়িত্ব পালন করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চাহিদা মেতাবেক সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য জানাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
ওই সূত্র জানিয়েছে, এখন শুধু গ্রাহকের লেনদেনের তথ্যই সরবরাহ করা হচ্ছে না; কোনো গ্রাহকের লকারের অবস্থানের তথ্যও সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার চাহিদা মোতাবেক আলোচিত গ্রাহক কোনো ব্যাংকের লকার ব্যবহার করছেন কি না- তার তথ্যও ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করতে হচ্ছে।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে যাদের নাম পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে, তাদের বিষয়ে বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে সামনে ডিসেম্বর ক্লোজিং এ ব্যাংকগুলো সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেব নিকেশ তৈরি করবে। এ জন্য নভেম্বর থেকেই এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে ব্যাংকগুলো। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ইতোমধ্যে ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। কিন্তু সন্দেহভাজন গ্রাহকদের তথ্য সরবরাহ এখন ব্যাংকগুলোর বাড়তি কাজ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে যে সব আলোচিত ব্যক্তির ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে- তারা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাদের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য সরবরাহ করার পাশাপাশি এখন তাদের নামে ব্যাংকের কোনো লকার ভাড়া নেয়া আছে কি না- তার তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক লেনদেনের তথ্যের পাশাপাশি লকার হোল্ডারদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে’।
প্রসঙ্গত, দুদক, এনবিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেব চাওয়া হয়েছে। কারো ব্যাংক লেনদেনে স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আবার কারো কারো বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংসদ সদস্য, সরকার দলীয় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মী, ব্যাংকের একজন সাবেক এমডি, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী রয়েছেন।