শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষা বাতিল এ দু’টির আদৌ প্রয়োজন আছে কি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০
  • ৪৯০ বার

করোনা মহামারীতে চলতি বছরের জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ ১৭ মার্চ থেকে। যদিও বিটিভি ও অনলাইনে পাঠদান চালু করা হয়েছে; তবে এতে খুব কম শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। আর যারা অংশ নিতে পারছে তারাও যথোপোযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে বলে জানা যায়নি। এ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ ৩১ আগস্ট থেকে বাড়িয়ে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো বিকল্প ছিল না।
এবারের জেএসসি ও জেডিসিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। এই বিপুল শিক্ষার্থীর সারা দেশে একযোগে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজন করা মানে এক মহাকর্মকাণ্ড। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীর জন্য সরকারের আরো বেশি অর্থ ও সামর্থ্যরে প্রয়োজন হয়। চলতি বছর এই খুদে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৯ লাখ। শিশুরা এই বয়সে আনন্দের সাথে শিক্ষায় যুক্ত হবে। কিন্তু পরীক্ষার যে চাপ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে; সেটি এখন বোঝা হয়ে উঠছে। আনন্দের বদলে শিশু বয়সেই দেখা দিয়েছে একঘেয়ে ও নিরানন্দ এই পরীক্ষার চাপ। ২০১১ সাল থেকে এ দু’টি পাবলিক পরীক্ষা চালু করা হয়। সরকার বিপুল অর্থ খরচ করে কেন এ দু’টি পাবলিক পরীক্ষা কোমলমতি শিশুদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে; এর কোনো সদুত্তর নেই। এসব পরীক্ষা প্রবর্তনের আগে জাতীয় পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কী কারণে নতুন করে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা চাপিয়ে দেয়া তা অস্পষ্ট। এ দুটো পাবলিক পরীক্ষা ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের যে চাপ সৃষ্টি করছে; তাতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, এ দু’টি পাবলিক পরীক্ষার কারণে নোট, গাইড বই এবং কোচিং ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক মওকা পেয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের যারা পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় জড়িত তারাও বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। যদিও ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে এ ধরনের কোনো সুপারিশ ছিল না। জেএসসি পরীক্ষা চালু করার ব্যাপারে একটি যুক্তি হলো, সরকারি চাকরিতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী। কিন্তু ২০১৬ সালে এ পদে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা। প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে কেন পাবলিক পরীক্ষার প্রয়োজন তার সপক্ষে একটি যুক্তিও নেই। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে স্কুল পর্যায়ে অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণীতে এবারের পাবলিক পরীক্ষা না নেয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর সাথে আমরা বলতে চাই, এই দু’টি পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হোক।
চলতি শিক্ষাবর্ষের আট মাস চলে গেছে। এর আগে নির্ধারিত সময় এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষাও নেয়া যায়নি। এ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী প্রায় ১৩ লাখ। বাংলাদেশের স্কুল ও কলেজের পাবলিক পরীক্ষা এক বিরাট কর্মকাণ্ড। তাই যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানে অনুকূল পরিবেশ ও প্রস্তুতি থাকা দরকার। এখানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় যেমন আছে, তেমনি আছে অভিভাবক, শিক্ষক ও পরীক্ষার কাজে সহায়তাকারী কর্মচারীদেরও। সারা বিশ্বের জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা চলছে এখন। ৮৪টি দেশ এ বছর স্কুল পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত করেছে বলে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে। এ অবস্থায় জাতীয়ভাবে পাবলিক পরীক্ষা বাদ দিয়ে বিকল্প কোন্ উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা যায় তার কৌশল খুঁজতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com