রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

পিকে হালদারের সেই দেড় হাজার কোটি টাকা কোথায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ২০১ বার

দেশের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অর্থের মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে- এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছেন। ঋণের নামে হাতিয়ে নেওয়া অবশিষ্ট অর্থের মধ্যে ১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ঋণ হিসাবে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে ৫০০ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) থেকে ৫১০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ৪০০ কোটি এবং নতুন প্রজšে§র একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর পিকে হালদার নামে-বেনামে গড়ে তোলা নামসর্বস্ব কিছু প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আত্মসাৎ করতে শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে প্রথমে তিনি টার্গেট করে প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেন। এর পর

সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে আত্মীয়স্বজন ও বিশ্বস্ত কর্মচারীদের বহাল করেন। আর সেসব পরিচালককে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদেও অনুগত লোকদের বসান তিনি। এর পর ঋণের কৌশলে পিকে হালদার প্রথমে কেনেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) বেশিরভাগ শেয়ার। এর পর কাগুজে কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করে আইএলএফএসএল থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ প্রতিষ্ঠানটি এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

একই প্রক্রিয়ায় তিনি এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এ প্রতিষ্ঠানটিও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডও তিনি একই প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণে নেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা এখন খেলাপি। খেলাপি ঋণের মধ্যে ৫৭০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে পিকে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামেই  নেওয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। আমানতকারীদের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এখন অবসায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে ৫১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ অর্থও পরিচালকরা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে পিকে হালদারই বেশিরভাগ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

এদিকে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি থাকাকালে পিকে হালদার নামে ও বেনামে ঋণ দিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে নিজ প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউসকে দিয়েছেন ৪০০ কোটি টাকা। এসব টাকায় তিনি নামে ও বেনামে শেয়ার কিনে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে নিজেদের লোকদের বসিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৫৮৩ কোটি টাকা।

পিকে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি থাকাকালে ওই ব্যাংকেও নজিরবিহীন লুটপাট করেছেন। ব্যাংকটি থেকে করোনার পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর কা-ে গ্রেপ্তার মো. সাহেদকে প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ ঋণ পাইয়ে দেন। এ অর্থ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। ব্যাংকটি থেকে পিকে হালদার নিজেও বেনামে নিয়েছেন প্রায় ৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ১৫০ কোটি টাকার বেশি, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১৪৬ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com