‘খলনায়ক শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়’ এই শিরোনামে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদক প্রকাশ হয়েছিল বিনোদন সময়ে। প্রকাশের পর অনেকেই প্রশ্ন করেছেন- কেন কেউ হতে চাচ্ছে না খলনায়ক? আবার জানতে চেয়েছেন- মিশা সওদাগরের পরে কে ধরবে হাল? চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে যেটি জানা গেল- মিশা সওদাগরের পর নায়িকা সংকটের পর ভায়াবহ রূপ ধারণ করবে খলনায়ক সংকটের বিষয়টি।
আগেই বলেছি, সিনেমার প্রাণ যদি হয়ে থাকেন নায়ক-নায়িকা, তবে ভিলেন বা খলনায়ক হচ্ছেন সেই প্রাণের স্পন্দন। কারণ খলনায়ক না থাকলে নায়কের নায়ক হয়ে ওঠা যে হয় না! তাই সিনেমায় ভালো মানুষদের জয়জয়কার হয়ই মন্দ মানুষরা গল্পে থাকেন বলে। তারাই গল্পকে শ্বাসরুদ্ধকরভাবে এগিয়ে নিয়ে গতি এনে দেন। এককালে খলনায়কদের দেখার জন্যও হলে গিয়েছে মানুষ। পর্দায় তাদের মৃত্যুতে উল্লাস করে হাততালি দিয়েছে। কিন্তু খলনায়ক সংকটের বীজটা বপন হয় নায়ক মান্নার মৃত্যু ও রিয়াজ-ফেরদৌসের বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর। একটা সময় ডিপজল ছিলেন দুর্ধর্ষ। নায়ক মান্নার সঙ্গে তার জুটি ছিল সুপারহিট। তাকে নিয়ে অবশ্য অনেকের আপত্তিও ছিল। অশ্লাীলতা চলচ্চিত্রে এনেছেন তিনি। তবে মান্নার মৃত্যুর পর ডিপজল বদলে নেন নিজের ইমেজ। ‘চাচ্চু’, ‘দাদীমা’সহ অনেক ছবিতে তিনি নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। তাকে আর খল চরিত্রে দেখা যায়নি। এর পরের সময়টা খলনায়ক হিসেবে মিশার ওপর নির্ভর করেই প্রায় ১০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে সিনেমা।
তরুণ প্রজন্মের গুটিকয়েক খল অভিনেতা অভিনয় করে প্রশংসিত হলেও শক্ত করে নিজের আসনটি ধরে রাখতে পারছেন না। নতুনদের তালিকায় আছেন শিবা শানু, শিমুল খান, ডিজে সোহেল, জাহিদ, টাইগার রবি, জিয়া ভিমরুল। কিন্তু দর্শক তাদের অভিনয় দেখে এক প্রকার হতাশ। আবার এসব অভিনেতারাও হতাশ তাদের অভিনীত চরিত্র নিয়ে! নামমাত্র চরিত্রে তাদের রাখা হয়। সেখানে নিজেদের খুব বেশি প্রমাণের সুযোগ নেই। অবার ছোট পর্দা থেকে কয়েকজন শক্তিমান অভিনেতার দেখা মিলছে বড় পর্দায় খল চরিত্রে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায় শহিদুজ্জামন সেলিম কিংবা ‘স্বপ্নজাল’-এর ফজলুর রহমান বাবুর নাম। ইরেশ যাকেরও খল চরিত্রে বেশ ভালো করছেন। ইতোমধ্যেই জাতীয় পুরস্কার মিলেছে।
খল চরিত্রে অভিনয় করেও যে স্টার হওয়া যায়, তার সর্বশেষ প্রমাণ তাসকিন রহমান। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় তার চরিত্রের গুরুত্ব ছিল। তার অভিনয়ও সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এক সময়কার বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় নায়ক নিজেদের ভিলেনরূপে পর্দায় হাজির করেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওমর সানী, রুবেল, আলেকজান্ডার বো, অমিত হাসান। কিন্তু সেভাবে কেউই ভিলেনরূপে জনপ্রিয়তা পাননি।
চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, ‘এখন সবাই চায় সস্তা জনপ্রিয়তা। অভিনয় জানে না তার পরও তার নায়ক হতে হবে! শুধু আলোচনায় থাকার ধান্দা। সবাই নায়ক-নায়িকা হতে চায়। এ জন্য চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালকদেরও সমস্যা আছে। খল চরিত্র তেমন শক্তিশালী করে গড়া হয় না। একটি সিনেমা যে শুধু নায়ক নয়, বরং অনেকে টেনে নিয়ে যায় এটা যেন ভুলে গেছে সবাই। এর ফলে সিনেমা হলে যেতেও দর্শক ভুলে যাচ্ছেন।’ অনেকে বলেছেন, ‘সিনেমায় এখন ভিলেনের মারামারি ও নায়িকার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা ছাড়া কোনো কাজ নেই। অথচ একটা সময় একজন ভিলেনের আসল শক্তি ছিল কূটচাল, গল্পের মোড় ঘোরানো। এখন এসব একদম নেই। মানে ছবিতে ভিলেন থাকলেও সে অংশটা দর্শকের মনে রাখার মতো কিছু হয় না।’
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা নারী খল চরিত্র নিয়েও হতাশ। খল চরিত্রে অভিনয় করে অনেকেই সময়ের ক্রেজ তৈরি করেছিলেন। দর্শক পর্দায় তাদের দেখলেই ভয় পেত এই বুঝি কারও সংসার ভাঙল, কারও হৃদয় ভাঙল। কিন্ত আজকাল কোনো নারীই মন্দ চরিত্রে অভিনয় করতে চান না। যারা আছেন তারা অনেকেই এখন কাজ করছেন না।
বিভিন্নজনেরা বলছেন, ‘নতুন প্রজন্মের দোষ দিয়ে লাভ নেই। পরিচালক-প্রযোজকরাই তাদের ঠিকমতো ব্যবহার করছেন না। যারা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পেরেছেন, তারা ফলও পেয়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন তাসকিন, শহীদুজ্জামান সেলিম, ইরেশ কিংবা ফজলুর রহমান বাবুরা। এদের দেখে হলেও নতুনদের সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।’