মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

চতুর্থ দিনের মতো রাস্তায় প্রবাসীরা: সিন্ডিকেট গিলছে সৌদি এয়ারের টিকিট

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ২২৯ বার

বৈশ্বিক করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আটকা সৌদি আরবে কর্মরত অধিকাংশ কর্মীরই আকামার মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ (প্রতিষ্ঠান মালিক-কফিল)। এদিকে শর্ত ভঙ্গের কারণে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল নিয়ে দুই দেশের (সৌদি-বাংলাদেশ) মধ্যে রশি টানাটানিতে বিপাকে পড়েছে সৌদি গমনেচ্ছু প্রায় ২০ হাজার যাত্রী। সৌদি আরবের ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত বাতিলের খবরে গত চার দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে (জাতীয় প্রেসক্লাব, মতিঝিল ও কারওয়ানবাজার এলাকা) বিক্ষোভ করে আটকে পড়া শত শত রেমিট্যান্সযোদ্ধা।

সমস্যার কোনো সুরাহা না হওয়ায় সৌদি আরবে যাওয়ার প্লেনের টিকিটের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ প্রবাসী। প্রথমে তারা কারওয়ানবাজারে সৌদি এয়ারলাইন্স এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয় অবরুদ্ধ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন। টিকিটের কৃত্রিম সংকটের অভিযোগও তোলেন তারা। এ সময় টিকিটের দাবিতে নানা সেøাগান দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পেয়ে সরে যান।

ভুক্তভোগী প্রবাসীরা বলছেন, বিমান চালাতে ঢাকা-রিয়াদের রশি টানাটানির ফলে তাদের সৌদিতে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে গেল। কারণ করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে যেসব প্রবাসী দেশে আসেন তারা লকডাউনে পড়ে আর ফিরে যেতে পারেননি। এরই মধ্যে অনেকের ভিসা, আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। নিজ কর্মস্থলে যোগাযোগ করলে তাদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয় ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিতে না পারলে আর সৌদি যাওয়ার দরকার নেই। এর পর দেশে আটকা পড়া বহু প্রবাসী টিকিটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। অনেকের ফিরতি প্লেনের টিকিট থাকলেও সেটিও পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৌদি আরব যেতে না পারলে অনেক প্রবাসী চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বেন। তাই রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা নিরসনে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভিসার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।

গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট নিতে এসে বিপাকে পড়েন সবাই। সৌদি ফিরে যাওয়ার বিমানের সিডিউল না পেয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকে দুদিন ধরে সিডিউল পাওয়ার আশায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের বাইরে অবস্থান করছেন। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় সিডিউল কবে মিলবে তারও নিশ্চয়তা নেই বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

এদিকে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেট করে বাণিজ্য শুরু করেছে একটি চক্র। এই সিন্ডিকেটে জড়িত কয়েকটি ট্রাভেলস এজেন্সি। টাকার বিনিময়ে টিকিটের টোকেনের সিরিয়াল ভেঙে আগের জনকে বাদ দিয়ে অনেক পরের জনকে টিকিট তুলে দিচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বিষয়টি অবগত হয়েছেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানও। এ সিন্ডিকেটের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বেবিচকের চেয়ারম্যান। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রীকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার বেবিচক আয়োজিত এক গণশুনানি অনুষ্ঠানেও টিকিট নিয়ে কারসাজির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের বিষয়টি তিনি উত্থাপন করেন বলে বেবিচক সূত্র জানায়।

গতকাল সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সে টিকিট নিতে এসে কারসাজির বিষয়টি জানতে পারেন সৌদি প্রবাসী বিল্লাল হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, গত রবিবার সৌদি এয়ারলাইন্স আমাকে টিকিট কাটার একটি টোকেন দেয়। নম্বর-১৩৭। এই টোকেন নিয়ে গত দুদিন টিকিট কাটার জন্য কাউন্টারে হন্যে হয়ে ঘুরছি। কিন্তু টিকিট দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। অথচ সৌদি এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইটের প্রায় ৬০০ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। প্রশ্ন হলো- আমার টোকেন সিরিয়াল ভেঙে কীভাবে পরের মানুষগুলো টিকিট পেল। এখানে শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে, তারাই এ কারসাজি করেছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, সৌদি আরবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। আশা করছি, চলমান জটিলতার অবসান হবে। শিগগিরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে।

টিকিট প্রাপ্তিতে কারসাজির বিষয়টি অবগত জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি সৌদি এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি। টিকিট প্রাপ্তিতে ভুক্তভোগীদের কারসাজির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছি। বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকেও বিষয়টি অবগত করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কারসাজির বিষয়টি উদঘাটনের জন্য বেবিচকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে কারওয়ানবাজারের ইটিভি গলিতে অস্থায়ীভাবে বসানো কম্পিউটারের দোকানে ভিসা চেক করাচ্ছিলেন আলমগীর হানিফ উদ্দিন। তার ভিসার মেয়াদ আছে আর ৮ দিন অর্থাৎ চলতি মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। আলমগীর আমাদের সময়কে জানান, পাঁচ মাসের ছুটি নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে আসার পর করোনা পরিস্থিতির কারণে আটকে যান। এর পর মালিকপক্ষ তাকে জানায়, করোনা গেলেই তারা সৌদি গমনের সময় নির্ধারণ করে দেবেন। সেভাবে অপেক্ষায় ছিলেন আলমগীর। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মালিকপক্ষের ফোন পেয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি নরসিংদী থেকে ঢাকায় এসে জানতে পারেন তার মতো অনেকেই ফ্লাইট সংকটে যেতে পারছেন না। এখন ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ও চাকরি হারানোর আতঙ্কে আছেন ছুটিতে আসা এই প্রবাসী।

সৌদি থেকে আসা সেলিম মিয়া জানান, মার্চের ৩ তারিখ তিনি দেশে আসেন। আসা-যাওয়ার টিকিট নিয়ে এসেছেন। আকামার মেয়াদ আছে মাত্র ৮ দিন। দু-এক দিনের মধ্যে যেতে না পারলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন সেলিম মিয়া।

এদিকে নোয়াখালী থেকে আসা সোহাত মিয়া জানান, তার ছুটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর। এ সময়ের মধ্যে সৌদি ফিরে যেতে না পারলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন জানান, ল্যান্ডিং পারমিশন নিশ্চিত হলেই ফ্লাইট ঘোষণা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com