করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে নির্বাচনেও। বয়স্ক বহু ভোটারই এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন- এমন চিত্র উঠে এসেছে রয়টার্স ও ইপসোস জরিপে। এতে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থনের একটি মূল ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়ছে। কারণ ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের দৌড়ে সহায়ক হয়েছিল এই বয়স্ক ভোটই।
জরিপটি বলছে, ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ও তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে বয়স্ক ভোট এখন প্রায় সমান ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত রয়টার্স ও ইপসোস জরিপের ফলে দেখা গেছে, ৫৫ বছর ও তার বেশি বয়সী ভোটারদের ৪৭ শতাংশই বাইডেনকে সমর্থন করেছেন। আর ৪৬ শতাংশ সমর্থন করেছেন ট্রাম্পকে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুতে দেশের বিপর্যস্ত অবস্থা, ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং যে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বয়স্করা সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে, সে ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের কারণে বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন কমছে। নির্বাচনের মাত্র ২৫ দিন আগে বিভিন্ন জনমত জরিপে এরই মধ্যে বাইডেনের চেয়ে জনসমর্থনে পিছিয়ে থাকা ট্রাম্পের জন্য বয়স্ক ভোটেও পিছিয়ে পড়াটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। কারণ বছরের পর বছর ধরে রিপাবলিকানরা জাতীয় নির্বাচনগুলোয় বয়স্ক আমেরিকানদের ভোটের ওপরই নির্ভর করে আসছে।
২০১৬ সালের নির্বাচনের বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্প ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ভোটারদের ১৩ শতাংশ ভোটে জিতেছিলেন। ২০১২ সালে রিপাবলিকান মিট রমনিও একই সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন। রয়টার্স/ইপসোস জরিপে এও দেখা গেছে, ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোয় ২০১৬ সালের ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়েও বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে ভালো করেছেন জো বাইডেন।
এ সপ্তাহে রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত জরিপে বয়স্ক আমেরিকানদের ৬১ শতাংশই বলেছেন, ট্রাম্প যেভাবে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সামলেছেন, তা তারা সমর্থন করেন না। গত মে মাসের তুলনায় এ সংখ্যা ১২ শতাংশ বেশি। বয়স্ক আমেরিকানদের ৮৩ শতাংশই করোনা ভাইরাসে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি অনেক বেশি। তাদের উদ্বেগের জায়গাটাও সেখানেই।
২০২০ সালের নির্বাচনী লড়াইয়ে এই রাজ্যগুলোয় জয় পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রার্থী এসব রাজ্যে জয় পাবে, তারই ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট জেতা এবং হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ সুগম হবে।
বিভিন্ন রাজ্যে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে এবং অক্টোবরের শুরুতে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, উইসকনসিন রাজ্যে বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে ১০ শতাংশে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। পেনসিলভানিয়া, মিসিগান, ফ্লোরিডা এবং অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের পক্ষে বয়স্ক ভোট যতটুকু আছে, বাইডেনও প্রায় কাছাকাছি সমর্থন পাচ্ছেন। চার বছর আগের নির্বাচনে ট্রাম্প এই রাজ্যগুলোয় ১০ থেকে ২৯ পয়েন্ট বয়স্ক ভোটে জিতেছিলেন। এবার পাঁচটি ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যে বয়স্ক ভোটারদের অর্ধেকই দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি, ট্রাম্পের দুর্বল নেতৃত্ব ও নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট নয়।