কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, শীতের সময় সমুদ্র শান্ত থাকে, এই সুযোগ নিয়ে নৌকায় করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের চেষ্টা ব্যাপক চেহারা নিতে পারে, এমন আশংকা থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত শনিবার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমুদ্রের একটি পয়েন্টে পাচারের একটি চেষ্টা ভণ্ডুল করে নয় জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে। এখন রোহিঙ্গারাই দালালদের মুল টার্গেট হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। যে পয়েন্টগুলো থেকে মানবপাচারের ঘটনা বেশি ঘটে, এমন একটি চিহ্নিত এলাকা হিসেবে শাহপরীর দ্বীপকে দেখা হয়।
এই দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য জানিয়েছেন, সেখানে লোকজন জড়ো করে ছোট ছোট নৌকার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের সমুদ্রের গভীরে নিয়ে বড় নৌকায় তুলে দেয়া হয় মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য।
শাহপরীর দ্বীপ থেকে একজন সমাজকর্মী মো: সোনা আলী বলছিলেন, শীতে সমুদ্র শান্ত থাকার সময়টাকে মানব পাচারকারীদের তাদের মৌসুম হিসেবে দেখে। এখন শীত আসার আগেই দালালসহ পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, “এখন এই অবৈধ মানবপাচারের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের ধরণ পাল্টে গেছে। যাকে পাচার করা হচ্ছে, তার জীবিত শরীর মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর পাচারকারীরা অর্থ নিয়ে থাকে। পাচারের আগে এ নিয়ে মৌখিক চুক্তি হয়।”
কক্সবাজারের পুলিশ বলেছে,গত দুই মাসে মানবপাচারের কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের সকলেই রোহিঙ্গা নারী পুরুষ। সর্বশেষ গত শনিবারও উদ্ধারকৃত নয় জনের সকলই রোহিঙ্গা। ফলে রোহিঙ্গারা এখন দালালদের মুল টার্গেট বলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মনে করছে।
তবে এই ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত পাচারকারী চক্র বা দালালদের কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন রামরু’র তাসনীম সিদ্দিকী বলছিলেন, অনিশ্চয়তা থেকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া প্রবণতা বাড়ছে।
“রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকটটা আমরা সেভাবে একটা লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারছিনা। তখন রোহিঙ্গা ভাল কিছুর আশায় মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। এর সাথে বাংলাদেশের নাগরিকরাও কিন্তু যাওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে রোহিঙ্গা বেশি হলেও বাংলাদেশের নাগরিকরাও পাচারের টার্গেটে থাকবে।”
তিন বছর আগে বঙ্গোপসাগরে দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে পাচারের চেষ্টা উদ্বেগজনক অবস্থায় গিয়েছিল। তখন থাইল্যান্ডে গভীর সমুদ্রে লোকজনকে আটকে রেখে এবং নির্যাতন করে সেটা দেখিয়ে বাংলাদেশে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা নিয়েও অনেক খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল।
থাইল্যান্ডে গণকবর আবিষ্কারের খবরও ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিল। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুলিশ সারাদেশে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে পাচারকারী সন্দেহ দুইশ’র বেশি লোককে গ্রেফতার করে অনেক মামলা করেছিল। এই মানব পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় মানব পাচারকারীরা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেছেন, তাদের ব্যবস্থাগুলো কার্যকর হয়েছে বলেই এখন মানবপাচারের চেষ্টা উদ্বেগজনক অবস্থায় নাই।
“আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা না থাকলে শত শত হাজার হাজার মানুষ পাচার হতো। কয়েক বছর ধরে সেই অবস্থা আর নাই। এখন চেষ্টা হলেই ধরা পড়ছে।”
তিনি আরও বলেছেন, “রোহিঙ্গাদের যাদের আত্মীয় স্বজন মালয়েশিয়ায় আছে, তারাই দালালের সহায়তা নিয়ে সমুদ্রপথে যাওয়া চেষ্টা করে।এটা মানব পাচার নয়। এটা ভিন্ন চেহারা নিয়েছে। কারণ এখানে নিজে থেকে যাওয়ার চেষ্টা হয়।”
তবে রোহিঙ্গা টার্গেট হলেও পাচারের চেষ্টা যে আছে, সেটা তিনি স্বীকার করেছেন।
এদিকে ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার জিরো টলারেন্স নিয়ে মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।