নিজ দেশে পরবাসী হওয়ার আতঙ্ক। আর সেই আতঙ্কের নাম এনআরসি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তা এখনো চালু না হলেও আতঙ্কে কুঁকড়ে রয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষ। তাদের মনে এখন একটাই আতঙ্ক, যেকোনো মুহূর্তে রাজ্যে শুরু হতে পারে এনআরসির কার্যক্রম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভয়বাণী সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে এনআরসি আতঙ্ক কমছে না।
কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সাইবার ক্যাফেগুলোতে ভোটার ভেরিফিকেশন করার জন্য গতকালও ছিল মানুষের লম্বা লাইন; কিন্তু ক্যাফেগুলো এ কাজে মানুষের কাছে অনেক টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও মোটা টাকার বিনিময়ে ভোটার ভেরিফিকেশন হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
তবে গরিব মানুষের মধ্যে এ আতঙ্ক দূর করতে এগিয়ে এসেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
নিউ টাউনের হাতিয়াড়াতে বিনামূল্যে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন শিবিরের আয়োজন করা হয় একটি সংগঠনের উদ্যোগে। শিবিরে এলাকার সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শিবিরে এনআরসি ও ভোটার তালিকা যে সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি বিষয় তা আলোচনার মাধ্যমে গ্রামবাসীকে জানানো হয়।
নিউ টাউনের বিশাল ভবনে বিধাননগর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড হাতিয়াড়ায় এই বিনামূল্যে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শুরু করা হয় সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে। সংগঠনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মহ: নিজাম উদ্দিন বলেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে আমরা এ পরিষেবা দিয়ে চলেছি। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটার পরিচয়পত্র যাচাইয়ের প্রচারও সংগঠনের তরফে করা হচ্ছে।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং শেষ সময়সীমা পর্যন্ত তা চলবে, যাতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো মানুষ ভোটার ভেরিফিকেশন থেকে বঞ্চিত না হন।
জানা গেছে, এই সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন চারজন যুবক ল্যাপটপের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রায় কুড়িটি পরিবারের ভোটার কার্ডের ভেরিফিকেশনের কাজ করছেন। প্রযুক্তিগত কারণে ভোটার ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেন সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আখের আলি।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সার্ভারের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে, যার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকে আবার দ্রুত কাজ করার চেষ্টায় অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। যদিও সবাইকে হতাশ না করে আমাদের এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।’
এনআরসির গুজবে যখন সাইবার ক্যাফগুলো মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে, সে সময়ে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভোটার তালিকা যাচাইয়ের এ শিবিরে এলাকার মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
ভোটার কার্ড নেই, জীবনে কখনো ভোটও দেননি, এমন মানুষও এনআরসি আতঙ্কে ভোটার কার্ড করার জন্য এই শিবিরে হাজির হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ভোটার কার্ড করতে আসা বছর মহ: আলি (৪৫) বলেন, দেশজুড়ে এনআরসি চালু হবে, এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই, তাই সময় নষ্ট না করে চলে এলাম নিজের ভোটার কার্ডটা তৈরি করতে। কারণ ভোটার কার্ড না থাকলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে চলে যেতে হতে পারে।
ইতোমধ্যে এনআরসি আতঙ্কে ব্যবসায়িক ফায়দা তুলতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার কিনে সাইবার ক্যাফে খুলে অনলাইনে ফরম ফিলাপ করে মোটা টাকা রোজগার করতে মাঠে নেমে পড়েছেন এলাকার যুবকরা। এ বিষয়ে এক যুবক বলেন, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বাড়িতে বেকার বসে ছিলাম; কিন্তু এনআরসি আতঙ্ক রুজির দরজা খুলে দিলো। এখন ল্যাপটপে বাড়িতে বসেই দিনে এক থেকে দুই হাজার টাকা ইনকাম হচ্ছে।