মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশটিতে এ যাবৎ ৮৭ লাখ ২ হাজার ৬০০ লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে মারা গেছে ২ লাখ ২৭ হাজার জন। দেশটির জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতলগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৪১ হাজার ৭৫৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজার ৪৮৮ জন রয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে উত্তরাঞ্চলে তথা নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যারিল্যান্ড, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, নিউ হ্যাম্পশয়ার, মেইন ও ভারমন্ট এলাকায় শীতকালের আবহাওয়ায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আর্দ্রতা, সূর্যের তাপ, ভিটামিন ডি’র অভাব এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ শীতকালে অন্যান্য ভাইরাস ও ফ্লু জাতীয় শ্বাসকষ্টের রোগের লক্ষণ বেশি দেখা দেয় বলে এ সময় মানুষ করোনাভাইরাস নিয়ে আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠতে পারে।
এদিকে, শুরুর দিকে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভয়ভীতি ছিল, এখন তা আর নেই বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন। মানুষ অনেকটা বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করছেন। মানুষের এই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ সংক্রমণ বাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মনে করে, শীতে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বলা যাচ্ছে না। শীতকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা জরুরি। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। নইলে সামনে বিপদ চলে আসতে পারে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ফলে বিশ্বের অনেক দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী, যার দৈনিক গড় হার ২ লাখের অধিক। তবে অনেক দেশে ভাইরাসের সংক্রমণ স্থিতাবস্থায় রয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। গত মার্চ মাসের শেষ দিকে নিউইয়র্ক সিটিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার বিস্ফোরণের মতো দাঁড়িয়েছিল এবং মৃতের সংখ্যাও ছিল অধিক এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে আসে। কিন্তু এখন তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে তা বেশি বাড়ছে। গত ২৬ অক্টোবর সোমবার আক্রান্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৩০০ জন, যা পূর্ববর্তী এক সপ্তাহের দৈনিক গড় ৭১ হাজারের অধিক।
২০টির বেশি স্টেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছার কারণে এর আগে বার ও রেষ্টুরেন্টগুলোতে লোক সংখ্যা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছিল তার উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশ ক’টি স্থানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে এবং রোগীর চাপ সামলাতে ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৪ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের ১১ লাখ ৫৪ হাজার অতিক্রম করেছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ব্রাজিলের অবস্থান তৃতীয় হলেও মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয়। এ যাবৎ ব্রাজিলে কনোরাভাইরাস আক্রান্ত ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৪ জন রোগী মারা গেছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ লাখ।
ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিতীয় বৃহত্তম, যেখানে ৭৯ লাখ লোক আক্রান্ত এবং এবং এযাবত মারা গেছে ১ লাখ ১৯ হাজার ১৪ জন। মেক্সিকোতে গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৯১ হাজার ১৬০ জন এবং এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ৮৮ হাজার ৯২৪ জনের। ইউরোপে সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যু ঘটেছে যুক্তরাজ্যে, যেখানে মারা গেছে ৪৪ হাজার ৯৮৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪০ জন রোগী।