মেইল-ইন-ব্যালট নিয়ে শীর্ষ আদালতে জোর ধাক্কা খেলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম থেকেই এনিয়ে বেসুরো গেয়ে চলেছেন তিনি। কারচুপির অভিযোগও তুলেছেন বহুবার। লাভ হয়নি। শেষে দাবি করেছিলেন, ৩ নভেম্বর নির্বাচনের পর আর যেন ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট গ্রহণ না করা হয়। বিদায়ী প্রেসিডেন্টের এই দাবি শুনেই আদালতের দ্বারস্থ হন ডেমোক্র্যাটরা। নিম্ন আদালতের রায় বিপক্ষে যেতেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ট্রাম্প শিবির। সেখানেও রায়ের বদল হল না। মামলায় জয় পেলেন বাইডেন শিবির। আদালত জানিয়েছে, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য—নর্থ ক্যারোলিনা ও পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনের কয়েক দিন পরও ব্যালট গ্রহণ করা যাবে।
কোভিড পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরেও। নির্দিষ্ট সময়ে জমা দিলেও মেইল-ইন-ব্যালট আসতে দেরি হতে পারে। এই যুক্তিতে ৩ নভেম্বরের পর থেকে ৯ দিন পর্যন্ত আসা ব্যালট গণনা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল নর্থ ক্যারোলিনা নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। নিম্ন আদালত সেই আবেদনে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টও সেই রায় বহাল রেখেছে।
অন্যদিকে, সেপ্টেম্বর মাসেই পেনসিলভেনিয়ার ক্ষেত্রে ভোটের পর আরো তিন দিন পর্যন্ত আসা মেইল বা অ্যাবসেন্টি ব্যালট গোনা যাবে বলে জানিয়েছিল আদালত। স্থানীয় রিপাবলিকানরা রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানালেও সুপ্রিম কোর্টে তা খারিজ হয়ে যায়। ভোটের আগে গুরুত্বপূর্ণ দুই রাজ্য নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে বড় জয় হিসেবেই দেখছেন ডেমোক্র্যাটরা। গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে যোগ দিয়েছেন নতুন বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট। তার যোগদানের ফলে সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা আরো শক্তিশালী হয়েছে। তার মধ্যেই এই রায়ে উৎফুল্ল টিম বাইডেন। অবশ্য ব্যারেট এই দু’টি মামলার কোনোটিতেই অংশ নেননি।
দুই রাজ্যে ‘ধাক্কা’ খেলেও ট্রাম্প শিবিরকে স্বস্তি দিয়েছে টেক্সাস আদালতের রায়। বেশি জায়গায় ব্যালট জমা দেয়ার বাক্স থাকলে জালিয়াতির আশঙ্কা বাড়বে বলেই মত রিপাবলিকানদের। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটের এই সিদ্ধান্তের পাল্টা আদালতে যায় ডেমোক্র্যাটরা। টেক্সাস আদালত এক রায়ে জানিয়েছে, ব্যালট জমা দেয়ার জন্য যদিও প্রতি কাউন্টিতে একটিমাত্র জায়গায় বাক্সগুলো থাকবে। এই সিদ্ধান্তে ভোটারদের অসুবিধা হবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাইডেন শিবির।
কোভিড আতঙ্কের মধ্যেই আগাম ভোটপ্রক্রিয়া চলছে। ভোটারদের বড় অংশই বেছে নিয়েছেন মেইল-ইন-ব্যালট। ইউএস ইলেকশন প্রোজেক্টের পক্ষ থেকে জানা গেছে, বুধবার বিকেল পর্যন্ত ৭ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ১৪২ জন ভোটার তাদের রায় জানিয়েছেন। যা ভেঙে দিয়েছে আগেকার যাবতীয় রেকর্ড। ব্যাপক হারে ভোট পড়লেও দেরিতে আসা, খামে ঠিকভাবে সই না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু ব্যালট বাতিল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডার্টমাউথ কলেজের অধ্যাপক মাইকেল হেরন এবং ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েল স্মিথ। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট ফ্লোরিডা নির্বাচনের আগে ব্যালট বাতিলের তথ্য প্রকাশ করে না। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ফ্লোরিডায় ৭ লক্ষ ৮০ হাজারের মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি ভোট বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে। ফ্লোরিডায় প্রায় সমানে সমানে লড়াই চলছে ট্রাম্প-বাইডেনের মধ্যে। এই পর্বে ব্যালট বাতিলের হার বেশি হলে ট্রাম্পের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবেন না।
সূত্র : বর্তমান