প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গেছেন, এমন দাবি করেননি, তবে তিনি জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেক্টরাল ভোট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। সেইসাথে তিনি ঐক্যের ডাকও দিয়েছেন। ৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণ শেষে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে দেয়া বক্তব্যে বাইডেন এই আহ্বান জানান।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে জো বাইডেনের লক্ষ্য ছিল নির্বাচন-পরবর্তী বিতর্কিত পরিবেশে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়া।
তিনি বিজয় ঘোষণা করেননি, কিন্তু বলেছেন তিনি নিশ্চিত যে, যখন সকল ভোট গোনা হবে, তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন। আর মিশিগান তার পক্ষে ঘোষিত হবার পর মনে হচ্ছে, জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট তিনি পাবেন।
ট্রাম্প যে পাল্টা পদক্ষেপ বা চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন, সেটা বাইডেন আমলে নিয়েছেন, যদিও তিনি প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ করেন নি। তিনি ক্ষমতা দখলের চেষ্টার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ”জনগণকে কণ্ঠরোধ বা হুমকি দিয়ে নিশ্চুপ করা যাবে না।”
তবে তিনি বেশি সময় ব্যয় করেন ঐক্যর আহ্বান জানিয়ে। তার সাথে তিনি জুড়ে দেন দলীয় বিভেদ ভুলে জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা, যেটা নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার মূলমন্ত্র ছিল। তিনি জানেন এটা অত্যন্ত কঠিন হবে, এমনকি তিনি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ডেমোক্র্যাট পার্টি একটি বিশাল বিজয় আশা করেছিল, যাতে বাইডেন ব্যাপক ম্যান্ডেট দাবী করতে পারেন। কিন্তু ফলাফল দেখিয়েছে এই বিভেদের শিকড় কত গভীর।
এদিকে বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্টনি যুরকার বলছেন, যে দুঃস্বপ্নের পরিস্থিতির আশঙ্কা অনেকেই করছিলেন, সেটিই এখন বাস্তবের দিকে এগুচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যা বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে এবং দেশ একটা দীর্ঘ ও তিক্ত আইনি লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
প্রচারণার সময়ই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন, নির্বাচনী ফলের ব্যবধান যদি খুব কম হয়, তিনি তার বিজয় ছিনিয়ে নেবার লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনবেন।
বুধবার সকালে তিনি প্রমাণ করলেন তার সেই হুঁশিয়ারি শুধু মুখের কথা ছিল না, সেটা তিনি কাজে পরিণত করতে চান। কয়েক লাখ বৈধ ব্যালট গণনা বাকি থাকতেই তিনি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন।
“আমরা এই নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রস্তুতই ছিলাম। এবং সত্যি কথা বলতে কী, আমরা আসলেই জিতেছি,” ট্রাম্প জানান।
কোনো তথ্য উপস্থাপন না করেই তিনি বলেন ভোটে “জালিয়াতি” হয়েছে।
“আমাদের জাতির জন্য এটা বিশাল এক জালিয়াতি। আমরা এখন যথাযথভাবে আইন ব্যবহার করতে চাই। কাজেই আমরা বিষয়টা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাই এবং আমরা সব ব্যালট গোণা বন্ধ করতে চাই।”
ট্রাম্প-বাইডেন সমান ভোট পেলে কী হবে
যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি রাজ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টর রয়েছেন, যারা মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট দেন। জয়ী হতে হলে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোটের প্রয়োজন।
অর্থাৎ, ড্র বা টাই হতে হলে প্রত্যেক দলকে ২৬৯টি করে ভোট পেতে হবে। এখন প্রশ্ন এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন উভয়ে যদি ২৬৯টি করে ভোট পান, তবে কী হবে? আবার নির্বাচন হবে? না।
ওই রকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বিজয়ী নির্ধারিত হবে মার্কিন কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ বা ‘হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’এর ভোটে তখন নির্ধারিত হবেন প্রেসিডেন্ট। প্রত্যেক রাজ্যের প্রতিনিধি একটি করে ভোট দিতে পারবেন এবং কোনো প্রার্থীর প্রেসিডেন্ট হতে অন্তত ২৬টি ভোট প্রয়োজন হবে।
আর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন সিনেটের ভোটের মাধ্যমে, যেখানে ১০০ জন সিনেটরের প্রত্যেকে একটি করে ভোট দেবেন।