মালয়েশিয়া ও ভারতের মধ্যকার একটি কূটনৈতিক বিরোধ দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যে সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে বক্তৃতাকালে বলেছিলেন যে নয়া দিল্লি জম্মু ও কাশ্মিরে আক্রমণ করেছে, দখল করেছে। তার এই বক্তৃতায় ক্রুদ্ধ হয় ভারত।
মাহাথির ২২ অক্টোবর কুয়ালামপুরে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি যে জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাবে কাশ্মিরের জনগণ উপকৃত হয়েছে। কেবল ভারত বা পাকিস্তান নয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের তা অনুসরণ করা উচিত।
তিনি বলেন, অন্যথায় জাতিসঙ্ঘ থাকার দরকার কী?
তিনি জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার জন্য ভারতের সমালোচনা করেন।
এর পর ভারতের ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে #BoycottMalaysia হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছে ভারতের অনেক ব্যবহারকারী।
মাহাথির স্বীকার করেছেন যে জাতিসঙ্ঘে তার বক্তৃতার ফলে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি পামওয়েলে বিশ্বের বৃহত্তম রফতানিকারক ও বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারকের মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
কাশ্মির ইস্যু নিয়ে মাহাথিরের দৃঢ় অবস্থানের কারণে দি সলভেন্ট এক্সট্রাক্টর্স এসোষিয়েশন অব ইন্ডিয়া (এসইএআই) সোমবার তার ৮৭৫ জন সদস্যকে মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়েল না কেনার আহ্বান জানিয়েছে।
এসইএআইয়ের সভাপতি অতুল চতুর্বেদী এক বিবৃতিতে বলেন, নিজের স্বার্থে এবং সেইসাথে দেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে, আমাদের উচিত হবে কিছু সময়ের জন্য মালয়েশিয়া থেকে কেনা এড়িয়ে যাওয়া।
ভারত যদি মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়েল কেনা বন্ধ করে দেয়, তবে কুয়ালামপুর সন্দেহাতীতভাবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাবে। ২০১৮ সালে ভারতে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারের পাম ওয়েল রফতানি করেছিল মালয়েশিয়া।
তবে প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রিজ মন্ত্রী তেরেসা কক বলেন, পাম ওয়েল অবরোধ নিয়ে মালয়েশিয়া সরকার উদ্বিগ্ন নয়।
তিনি বলেন, ভারত কখনো সরকারিভাবে মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়েল আমদানি বয়কট বা নিষিদ্ধ করার কথা জানায়নি। ভারত সরকার বা এর বণিক সমিতিগুলোর কথা থেকেও কোনো বিবৃতি আসেনি।
একইভাবে মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী আজমিন আলী বলেছেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দেশের পাম ওয়েল বয়কট দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য পাম ওয়েল উৎপাদনকারী ঘাটতি মেটাতে পারবে না।
তিনি বুধবার পার্লামেন্টে বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা দ্রুত ও কার্যকরভাবে সমস্যাটির সমাধান করতে পারব।
কাশ্মির প্রশ্নে সংলাপই সমাধান
জাতিসঙ্ঘের ৭৪তম অধিবেশনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান কাশ্মির প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধ নিসনে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
এরদোগান জোর দিয়ে বলেন যে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে কাশ্মির ইস্যু থেকে আলাদা করা যায় না।
তিনি বলেন, কাশ্মিরি জনগণ যাতে তাদের পাকিস্তানি ও ভারতীয় প্রতিবেশীদের সাথে নিরাপদ থাকতে পারে সেজন্য সংলাপের মাধ্যমে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে কাশ্মির সমস্যার সমাধান করা উচিত।
ভারত গত ৫ আগস্ট ভারত-শাসিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা-সংবলিত অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে একে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করে।
এর জের ধরে রাজনীতিবিদসহ শত শত লোককে গ্রেফতার করা হয়।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই কাশ্মিরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং পুরো এলাকাটি নিজের বলে দাবি করে থাকে। কাশ্মির নিয়ে দুই দেশ দুবার যুদ্ধ করেছে।
এদিকে জাকার্তার নাসাতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও লেকচারার দিনা উইসনু বলেছেন, মালয়েশিয়া ও ভারতীয় উভয় দেশের নেতারা মনে হচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ একটি সমস্যাকে আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়ে যেতে চায়।
তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বয়কট প্রশ্নে বলেন, এমনটা হওয়া উচিত নয়।
জাকার্তার সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ফিতরি বিনতাং তৈমুর বলেন, মাহাথির চাচ্ছেন পাকিস্তানের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে।
তিনি আশ্বস্ত করেন, এই বিরোধ ভারতীয় ও মালয়েশিয়ানদের মধ্যে নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে না। উভয় দেশই ব্যবসা ও বিনিয়োগ খাতে ব্যাপকভাবে জড়িত।
তিনি বলেন, উভয় দেশের উচিত উত্তেজনা প্রশমনে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তৈমুর বলেন, দুই দেশের মধ্যে সাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য সংলাপ হওয়া উচিত এই বিরোধ অবসানের জন্য।
আনাদুলু এজেন্সি