মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩২ অপরাহ্ন

প্রসবকালীন অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রতি হাজারে ৩ শিশু সেরিব্রাল পলসিতে ভোগে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০
  • ১৭৪ বার

প্রসবকালীর অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রতি হাজারে তিন শিশু সেরিব্রাল পলসি (সিপি) নিয়ে জন্মাচ্ছে। বিশ্বে এক কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত। এ ধরনের শিশুদের লালন-পালনে জড়িত প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ। এটি একটি জীবনব্যাপী সমস্যা। এই সমস্যা আক্রান্ত শিশুদের প্রতি চারটির একটি সঠিকভাবে কথা বলতে পারে না। একই সাথে অন্যের কথা ভাল করে বুঝতেও পারে না। প্রতি দু’জনের একজন শিশু শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিহীন হয়ে বেড়ে উঠে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এভাবেই জীবন চালিয়ে নিতে হয় অন্যের সহায়তায়। সাধারণত এ ধরনের শিশুরা ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এছাড়া প্রতি চার শিশুর একটি মৃগী রোগেও আক্রান্ত হয়।

এতোদিন অনিরাময়যোগ্য থাকলেও এখন অস্ত্রোপচারে সুস্থ হচ্ছে কিছু কিছু শিশু। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রসবকালে অক্সিজেন স্বল্পতা শিশুর এ রোগের অন্যতম কারণ। নিরাপদ প্রসব রোগটির হার ৭০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। বলা হচ্ছে, গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্মের সময় কিংবা জন্মের তিন বছরের মধ্যে মস্তিস্কে কোনো আঘাত পেলে শিশুরা সেরিব্রাল পলসিতে ভুগতে পারে। অধিকাংশ চিকিৎসকই মনে করেন, গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিস্কে আঘাতই ৭০ শতাংশ সেরিব্রাল পলসির অন্যতম কারণ।

সেরিব্রাল পলসিতে ভুগলে শিশুর অঙ্গগুলো সঠিক কাজ করে না। ফলে এ ধরনের শিশুকে সারাজীবন অনিরাময়যোগ্য রোগে ভোগেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট নিউরো সার্জন ও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো: ফরিদুল ইসলাম বলেন, সিপি হলে শিশুর মাংসপেশী অসাড় হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। হাটার সময় টল-টলায়মান অবস্থা হয়। মনে হয়, এই বুঝি পড়ে যাবে। এছাড়া সিপি হলে আক্রান্তরা সঠিকভাবে পা ফেলতে পারে না, কথা বলতে কষ্ট হয়, হাত দিয়ে কোনো কিছু তুলতে পারে না, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাঁপতে থাকে। কিছু কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো- কোনো খাবার সহজে গিলতে না পারা, চোখের পেশির ভারসাম্যহীনতার কারণে নির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টিপাত করতে না পারার ফলে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে ভাল করে দেখতে পারে না, দাঁতের সমস্যাও থাকে তাদের। এছাড়া এর সঙ্গে বুদ্ধিহীনতাও দেখা দিতে পারে। সিপি আক্রান্ত শিশুদের একই সঙ্গে মৃগীরোগ, অন্ধত্ব কিংবা বধিরতার মতো সমস্যাগুলোও থাকতে পারে।

অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম জানান, সেরিব্রাল পলসি রোগ হলে নিউরোসার্জনরা কিছু অপারেশন করে থাকে। ফলে রোগী কিছুটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু মূল সমস্যাটি মস্তিস্কে। এ ধরনের শিশুর মাথা সাধারণত ছোট হয়ে থাকে। মাথার খুলির নিচে যথেষ্ট জায়গা থাকে না মস্তিস্ক সঠিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে না। মস্তিস্ককে নড়াচড়া করতে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিলে এটা কাজ করতে শুরু করে এবং শিশু অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। তিনি জানান, বিশ্বের কোথায় সেরিব্রাল পলসি হলে মস্তিস্ক নড়াচড়ার করার কোনো ব্যবস্থা করা হয় না।

তিনি জানান, তিনিই প্রথম গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে খুলি কেটে বড় করে দেয়ার ব্যবস্থা করি। ফলে সেরিব্রাল পলসিতে ভোগা শিশুদের অনেক উন্নতি হচ্ছে। তাদের অস্বাভাবিক আচরণ বন্ধ হচ্ছে এবং অনেকটা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে। তিনি জানান, এ বিষয়টি বিশ্বে একেবারেই নতুন। এ কারণে কানাডার নিউরো সার্জনরা আমাকে আমন্ত্র জানিয়েছেন সেখানে গিয়ে বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলার জন্য। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালার আয়োজনও হবে। করোনার সমস্যা চলে গেলেই সেরিব্রাল পলসি রোগের অস্ত্রোপচার বিষয়ক সেমিনারটির আয়োজন।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্বে তিনিই একমাত্র সার্জন যে অস্ত্রোপচার করে সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত কয়েকজন শিশুকে সুস্থ করেছেন। উল্লেখ্য এ বিষয়ে আগামী শনিবার রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নিউরো সার্জনদের উপস্থিতিতে এ বিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com