শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ অপরাহ্ন

পোশাক খাতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০
  • ২২২ বার

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির শুরুতে মুখ থুবড়ে পড়া দেশের পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতেও গতি আসতে শুরু করেছিল। উদ্যোক্তারাও বেশ স্বস্তিবোধ করছিলেন। কিন্তু সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রপ্তানিকারকদের চ্যালেঞ্জে ফেলছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বিজিএমইএ তথ্য মতে, গত অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির খবর এসেছিল পোশাক খাত থেকে; অক্টোবর মাসে এসে সেই ধারায় ব্যাহত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের ঋণ সহায়তা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাহস করে কারখানা চালু করাসহ আরো কিছু কৌশল নিয়ে বাংলাদেশে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। এখন যেহেতু নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, আগের পদক্ষেপগুলো মূল্যায়ন করে নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া উচিত।
উদ্যোক্তারা বলছেন, পণ্যমূল্য কমে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচ যাচ্ছে বেড়ে। রপ্তানির পরিমাণও কমে যাচ্ছে।

নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের জন্য নতুন কার্যাদেশ এসেছে আগের বছরের তুলনায় কম। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতে পড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা।
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা উদ্বিগ্ন। বেশ সতর্কতার সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের মতো। গত বছরের শেষে চীন থেকে নতুন করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। সেই ধাক্কা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে দেখা দেয় মার্চ মাসের শুরুতে। ২০১৯ সালের মার্চে যেখানে ২৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, চলতি বছরের মার্চে তা ২২৫ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো ছিল কার্যত বন্ধ। এমনকি পণ্য জাহাজিকরণও অনেকটা থমকে ছিল। এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল মাসে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব হয়; যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম। তবে ইউরোপের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি এবং দেশের পোশাক কারখানাগুলো খুলতে শুরু করার পর ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এ খাত। মে মাসে ১২৩ কোটি এবং জুন মাসে ২২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির মধ্য দিয়ে ধাক্কা অনেকেটা সামলে ওঠা সম্ভব হয়। জুনে পোশাক রপ্তানিতে ৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও পরের তিন মাসের (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি কারখানা মালিকদের মনে সাহস ফিরিয়ে আনে। কিন্তু অক্টোবরের ৭.৭৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আবার নতুন করে শঙ্কা জাগাচ্ছে।
ইপিবি ও বিজিএমইএর তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ওভেন পোশাক রপ্তানি খুব ভালো করতে না পারলেও নিট পোশাকের রপ্তানি ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। সব মিলিয়ে জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানিতে ১.৯৮ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, এরপর আগস্ট মাসে ২.৫৮ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩.০৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু অক্টোবর মাসে এসে আগের বছরের ওই মাসের চেয়ে রপ্তানি কমে গেছে ৭.৭৮ শতাংশ।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর আগেই দেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলোতে লকডাউন শুরু হয়েছিল। ফলে মার্চের শুরু থেকেই একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করতে শুরু করেন পশ্চিমা ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে পোশাক খাতে অস্থিতরা দেখা দেয়। একদিকে চলতে থাকে ছাঁটাই, অন্যদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামেন কর্মীরা। লকডাউনের কারণে কিছুদিনের জন্য কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও লোকসান কমাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবার কাজ শুরু করেন মালিকরা। বিদেশি ক্রেতাদের স্থগিত করা অনেক কাজও আবার ফিরতে শুরু করে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক মাঠ জরিপে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে পোশাক খাতের পুরুষ কর্মীরা গড়ে মাত্র ৪৩ ঘণ্টা এবং নারী কর্মীরা ৪২ ঘণ্টা কাজ করেন। মে মাস থেকে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আগস্ট সেপ্টেম্বরে তা আবার ২০১৯ সালের মতো মাসে ২৪৬ ঘণ্টায় ফিরে আসে।
কর্মীদের বেতন পরিশোধের জন্য সরকারের দেয়া স্বল্প সুদের ঋণও পোশাক কারখানা মালিকদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহস জোগায়।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, মহামারির সংকট মোকাবিলায় সরকার যে প্রণোদনামূলক ঋণ দিয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকটাই নিয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে যেখানে ২৭.৬৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে হয়েছে ২২.৩৮ বিলিয়ন ডলারের।
বছর শেষে এই ব্যবধান আরো কমে আসবে বলেই আশা করছিলেন বাজার বিশ্লেষকরা। আর ব্যবসায়ীরা আশা করছিলেন, ডিসেম্বরে বড়দিনের পর্ব ঘিরে ক্রেতা দেশগুলোতে বিক্রি আরো বাড়বে। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়ে যাচ্ছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে নতুন করে লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরাও নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, এখন আবার পশ্চিমা দেশগুলোতে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফলে রপ্তানির ভলিউম আবার কমে যেতে পারে। ক্রেতারা তাদের অর্ডার স্থগিত করে দিতে পারেন। এসব ঘটনা ঘটলে কারখানাগুলোতে আবারো কর্মহীনতা সৃষ্টি হবে। মহামারির প্রথম ধাক্কায় অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়া আর্থিক সক্ষমতায় নতুন করে কোনো সংকট এলে মোকাবিলা করা ‘কঠিন হবে’ বলেই মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com