ভোটের পর থেকে নিজ দাবিতে অনড় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার সুর পাল্টেছেন। এতদিন তার দাবি ছিল, নির্বাচনে তারই জয় হয়েছে। ভোটের ফল প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে জয়ী বললেও তা মানতে নারাজ ছিলেন ট্রাম্প। ফল চ্যালেঞ্জ করে অসংখ্য মামলাও করেছিল ট্রাম্প শিবির। এবার অবস্থান কিছুটা পাল্টে ট্রাম্প বললেন, বাইডেন জিতেছেন, কারণ নির্বাচনটি জালিয়াতপূর্ণ ছিল। গতকাল রবিবার সকালে এক টুইটে এ মন্তব্য করেন।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা রাজধানীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বিবিসি জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসির বেশ কিছু এলাকায় ট্রাম্পবিরোধীদের সঙ্গে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদীদের হাতাহাতি, ছুরিকাঘাত, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। চূড়ান্ত ভোটগ্রহণের দুই সপ্তাহের মাথায় এমন সহিংসতার ঘটনা ঘটল। সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ২০ জনকে। ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে জর্জিয়াতেও বিক্ষোভ, সহিংসতা হয়েছে।
গতকাল ট্রাম্প তার টুইটে বাইডেনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘তিনি জিতেছেন, কারণ নির্বাচন জালিয়াতপূর্ণ ছিল। কোনো নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ছিল না। ভোট গণনা করেছে কট্টর বামপন্থী ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠান ডমিনিয়ন; যাদের দুর্নাম রয়েছে। তাদের সরঞ্জামগুলো খুবই বাজে, যা টেক্সাসের ভোট গণনার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিতই হয়নি (এবং সেখানে আমি বড় ব্যবধানে জিতেছি)।’ টুইটে মিডিয়াকেও একহাত নেন ট্রাম্প। ৩ নভেম্বরর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত
ভোটগ্রহণের দিন ছিল। এতে জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন। তার ঝুলিতে মোট ৩০৬ ইলেকটোরাল ভোট পড়েছে। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। ৫৩৮ ভোটের ইলেকটোরাল কলেজে জয়ের জন্য নূন্যতম ২৭০ ভোট পাওয়া লাগে। জনপ্রিয় ভোটেও ট্রাম্প বাইডেনের থেকে অন্তত অর্ধ কোটি ভোট কম পেয়েছেন।
পরোক্ষ ইঙ্গিত দিলেও এখনো পরিষ্কারভাবে পরাজয় স্বীকার করেননি ট্রাম্প। ভোট জালিয়াতি নিয়ে তিনি বেশ কিছু অপ্রমাণিত দাবি তুলেছেন। সেসব দাবির সপক্ষে শনিবার ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার সমর্থক। এ সময় ‘ভোটচুরি বন্ধ কর’ সেøাগান দেন তারা। অনেকের হাতেই ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ সেøাগানধারী পতাকা দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি, ছিল না শারীরিক দূরত্বের বালাইও। পরে তারা মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের দিকে মিছিল নিয়ে যান। তবে রাত নামতেই শান্তিপূর্ণ
বিক্ষোভ ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে বেশকিছু জয়গায় মারামারি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের দৃশ্য দেখা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষস্থল থেকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হামলা ও অস্ত্র রাখাসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় অন্তত দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
শহরের জরুরি মেডিক্যাল সেবা বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছুরিকাঘাতে আহত এক ব্যক্তিকে দ্রুত স্থানীয় একটি ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে ট্রাম্প সমর্থক ও তাদের পাল্টা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতপ্রাপ্ত হন ওই ব্যক্তি। সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতেই লাঠিসোঁটা দেখা গেছে।
এ দিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সমর্থকদের সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিক্ষোভ চলাকালে এর পাশ দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে না দাঁড়িয়ে সোজা ভার্জিনিয়ায় নিজের গলফ ক্লাবে চলে যান ট্রাম্প। অবশ্য গাড়িতে বসেই জানালা দিয়ে হাসিমুখে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়েছেন তিনি। পরে বিক্ষোভের একটি ভিডিও রিটুইট করে এ রিপাবলিকান নেতা লিখেছেন, ‘আমরাই জিতব!’