বিশ্বে প্রথম করোনা টিকা নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন ব্রিটেনের মার্গারেট কিনান। তবে ৮ ডিসেম্বর টিকা নেয়ার ঘটনাকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন দেশটির নেটিজেনদের একাংশ। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে দিচ্ছেন অনেক সংজ্ঞাও। তারা দাবিও করেছেন, মার্গারেট মারা গিয়েছেন ২০০৮ সালে। আর মার্গারেট সেজে টিকা নেয়ার ঘটনায় অভিনয় করেছেন লিজ স্কট নামের এক ক্রাইসিস অ্যাক্টর। এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক, তবে কি ফাইজারের তৈরি প্রথম করোনা টিকা নেয়া ঘটনাটি সাজানো? এমন প্রশ্নও করছেন অনেকে। তবে সত্য-মিথ্যার অপেক্ষা না করেই ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে বিষয়টি।
এ দিকে নিজেদের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে নেটিজেনদের একাংশ লিজ স্কটের পেশা নিয়েও বিবরণ দিয়েছেন বিস্তারিত। অভিনেতা হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে লিজের।এর আগে তিনি পুলিশ, দমকল বাহিনী ও মেডিক্যাল কর্মীদের জন্য ক্রাইসিস অ্যক্টর হিসেবে অভিনয় করেছেন। জরুরি সেবার সাথে জড়িত কর্মীরা বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যে মহড়া চালায়, তাতে আক্রান্তের ভূমিকায় অভিনয় করে থাকেন লিজের মতো ক্রাইসিস অ্যাক্টররা।
ফাইজারের টিকাকে ভুয়া বলে তার প্রমাণ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ছবিরও কোলাজ তুলে ধরেছেন নেটিজেনরা। তার একটিতে রয়েছে সেপ্টেম্বরের করোনা টিকা বিরোধী ট্রাফালগর স্কোয়্যারের বিক্ষোভের একটি ছবি। ছবিতে দেখা যায়, মধ্য লন্ডনের ওই বিক্ষোভের সময় একটি নারী চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছেন। ওই নারীকেই লিজ বলে দাবি করেছেন অনেক নেটিজেন।
ছবিটি তুলে তারা দাবি করেন, এই নারীই মার্গারেটের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ওই বিক্ষোভের সময় পড়ে যাওয়া নারী, লিজ ও মার্গারেটের কোলাজ করা ছবি শেয়ার করে এক ফেসবুক ইউজার লিখেছেন, ‘লিজ স্কটের সাথে পরিচয় করুন। একজন নামকরা ক্রাইসিস অ্যাক্টর। করোনা টিকা নেয়ার পর নিজের পরিচিত ইলুমিনাতি হ্যান্ড সাইনও দেখাচ্ছেন। এবার তিনি ৯০ বছরের মার্গারেট কিনানের ভূমিকায় অভিনয় করলেন, যিনি ২০০৮ সালে মারা গিয়েছেন। কিন্তু দেখুন টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে, তিনি প্রথম করোনা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন’।
তবে কি সোশ্যাল মিডিয়ার এই তত্ত্বই সঠিক? ঘটনাটি নিয়ে তদন্তে নামে একটি ভারতীয় মিডিয়া ‘ইন্ডিয়া টুডে’। এক রিপোর্টে তারা পাল্টা দাবি করে বলেন, প্রথম করোনা টিকা নিয়ে এই তত্ত্ব একেবারেই ভিত্তিহীন।
ওই রিপোর্ট জানিয়েছে, ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস)-এর তথ্য খুঁজে দেখা যায়, জুয়েলারি স্টোরের অ্যাসিস্ট্যান্ট পদ থেকে বছর চারেক আগে অবসর নিয়েছিলেন মার্গাররেট। ৮ ডিসেম্বর টিকা নেয়ার পরও অনেক লাইভ অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। ফলে ২০০৮ সালে তার মৃত্যুর খবরটাই আসলে ভুয়া।
তবে কি লিজের সাথে মার্গারেটের মুখের মিল রয়েছে বলেই নেটিজেনদের একাংশ ভুল তত্ত্ব দাঁড় করেছেন? এ নিয়ে ‘স্টারনাও’ নামে একটি কাস্টিং এজেন্সি থেকে লিজ ও মার্গারেটের ছবি তুলনা করলেও অমিল বের দেখা যায়। ওই এজেন্সির ছবিতে স্পষ্ট, নবতিপর মার্গারেটের তুলনা লিজ অনেক কম বয়সি। পাশাপাশি, লিজের চোখের রং বাদামি হলেও মার্গারেটের ধূসর। এনএইচএস-এর বেশির ভাগ টুইটে মার্গারেটের যে ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে সব সময়েই মাস্ক পরে থাকলেও তার মুখমণ্ডল পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ওই ছবির সাথেও লিজের মিল নেই।
ছবির তুলনামূলক বিচার ছাড়াও ট্রাফালগার স্কোয়্যারে বিক্ষোভও এই তত্ত্বকে নস্যাৎ করছে। মার্গারেট বরাবরই করোনা টিকার পক্ষে বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে, ২৭ সেপ্টেম্বর ওই বিক্ষোভ হয়েছিল লকডাউন তথা করোনা টিকার বিরুদ্ধে। ফলে ওই বিক্ষোভের সময় চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়া নারী যে মার্গারেট নয়, তা স্পষ্ট।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা